১১:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়া শুরুর হুঁশিয়ারি এস আলমের

রিপোর্টার
  • সময় : ০৩:৫১:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১৫ বার দেখেছে

বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘হুমকির প্রচারণা’ করছে অভিযোগ করে এই শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তি এবং সিঙ্গাপুর নাগরিক হিসেবে তার মর্যাদা তাকে সুরক্ষা প্রদান করবে। এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুরকে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এস আলম গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন ডলার) পাচারের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারপ্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই এক হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করে নিয়ে গেছেন। এস আলম গ্রুপের সদস্যরা ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে ঋণ প্রদান এবং আমদানি ভাউচারের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।

ওই সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষিতে এস আলম পরিবারের পক্ষে এই চিঠি দিয়েছে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উর্কুহার্ট অ্যান্ড সালিভান। এই চিঠির একটি অনুলিপি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে এসেছে। তাতে অভিযোগ করা হয়, গভর্নর আহসান মনসুর এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনসমক্ষে ভিত্তিহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তার এ বক্তব্য এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক’ আখ্যা দেয়া হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ পরিচালনায় হাতেখড়ি ছেলে আরিয়ানের, গর্বিত শাহরুখ
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভুল ও মানহানিকর।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের মন্তব্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের বিদেশি বেসরকারি আইন অনুসারে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এস আলম ও তার পরিবারের অধিকার ও সুরক্ষা আছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা হিসেবে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু আন্তর্জাতিক সালিশি মামলা নয়, প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

এস আলম গোষ্ঠীর এই চিঠি ও আন্তর্জাতিক সালিশি মামলার হুমকি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাঘাত।

সাইফুল আলম কবে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, সে বিষয়ে আইনি প্রতিষ্ঠানের কাছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানতে চাইলে তারা সাড়া দেয়নি। তারা এখনো বাংলাদেশের নাগরিক কি না, তা–ও জানা যায়নি। সিঙ্গাপুর সরকারও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আইন মেনে বিদেশে বিনিয়োগের কোনো অনুমোদন সাইফুল আলম নেননি। দেশের যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগ করেছে, সেই তালিকায় সাইফুল আলমের নাম নেই।

অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের আইনে ২৫ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ২৩ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে নাগরিক হওয়া যায়। এ জন্য তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। পাশাপাশি সেই দেশে আরও বিনিয়োগ করতে হয়। এটা করতে পারলে তাদের ছেলে সন্তানেরা সে দেশে সরকারি চাকরির সুযোগও পান। তবে সিঙ্গাপুরের নাগরিক নিতে হলে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়।

শেয়ার করুন

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়া শুরুর হুঁশিয়ারি এস আলমের

সময় : ০৩:৫১:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘হুমকির প্রচারণা’ করছে অভিযোগ করে এই শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তি এবং সিঙ্গাপুর নাগরিক হিসেবে তার মর্যাদা তাকে সুরক্ষা প্রদান করবে। এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুরকে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এস আলম গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন ডলার) পাচারের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারপ্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই এক হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করে নিয়ে গেছেন। এস আলম গ্রুপের সদস্যরা ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে ঋণ প্রদান এবং আমদানি ভাউচারের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।

ওই সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষিতে এস আলম পরিবারের পক্ষে এই চিঠি দিয়েছে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উর্কুহার্ট অ্যান্ড সালিভান। এই চিঠির একটি অনুলিপি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে এসেছে। তাতে অভিযোগ করা হয়, গভর্নর আহসান মনসুর এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনসমক্ষে ভিত্তিহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তার এ বক্তব্য এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক’ আখ্যা দেয়া হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ পরিচালনায় হাতেখড়ি ছেলে আরিয়ানের, গর্বিত শাহরুখ
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভুল ও মানহানিকর।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের মন্তব্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের বিদেশি বেসরকারি আইন অনুসারে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এস আলম ও তার পরিবারের অধিকার ও সুরক্ষা আছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা হিসেবে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু আন্তর্জাতিক সালিশি মামলা নয়, প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

এস আলম গোষ্ঠীর এই চিঠি ও আন্তর্জাতিক সালিশি মামলার হুমকি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাঘাত।

সাইফুল আলম কবে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, সে বিষয়ে আইনি প্রতিষ্ঠানের কাছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানতে চাইলে তারা সাড়া দেয়নি। তারা এখনো বাংলাদেশের নাগরিক কি না, তা–ও জানা যায়নি। সিঙ্গাপুর সরকারও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আইন মেনে বিদেশে বিনিয়োগের কোনো অনুমোদন সাইফুল আলম নেননি। দেশের যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগ করেছে, সেই তালিকায় সাইফুল আলমের নাম নেই।

অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের আইনে ২৫ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ২৩ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে নাগরিক হওয়া যায়। এ জন্য তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। পাশাপাশি সেই দেশে আরও বিনিয়োগ করতে হয়। এটা করতে পারলে তাদের ছেলে সন্তানেরা সে দেশে সরকারি চাকরির সুযোগও পান। তবে সিঙ্গাপুরের নাগরিক নিতে হলে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়।