Site icon আপনার বার্তা

কাতার বিশ্বকাপের দুই বছর পর জার্মানরা বুঝল, ‘রাজনীতি করা ঠিক হয়নি’

কাতার বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর হয়ে গেল। ফ্রান্সকে হারিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জেতা আর্জেন্টিনা পরের বিশ্বকাপ খেলাও প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে। এত দিন পর ২০২২ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়া জার্মানি দলের উপলব্ধি, সেই বিশ্বকাপে তাদের ‘রাজনীতি’ করা ঠিক হয়নি।

২০১৮ সালের পর ২০২২ সালেও বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক কাতারের একটি নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে গ্রুপ ছবি তুলেছিল জার্মান দলটি। দুই বছর পর জার্মানির সেই দলের অংশ ও বর্তমান অধিনায়ক ইয়োশুয়া কিমিখ বললেন, ‘সে সময়ে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ঠিক কাজ করিনি।’

কাতারে সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেটাকে মানবাধিকারবিরোধী বলেই মনে করে পশ্চিমা দেশগুলো। তাই বিশ্বকাপ চলাকালে ইউরোপের সাতটি দেশ পরিকল্পনা করেছিল ‘ওয়ানলাভ’ লেখা বাহুবন্ধনী পরে খেলতে নামার।

আমাদের খেলোয়াড়দের বিশেষ করে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট মূল্যবোধের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তবে সব সময় রাজনৈতিক মতাদর্শের জানান দেওয়াটা আমাদের কাজ নয়।
ইয়োশুয়া কিমিখ, অধিনায়ক, জার্মানি
শেষ পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার শাস্তির হুমকিতে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি ওই সাত দেশ। তবে জার্মানির খেলোয়াড়েরা জাপানের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগে গ্রুপ ফটো তুলতে গিয়ে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে প্রতিবাদ জানান। যে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়েছিল জার্মানি। সেই ম্যাচের পর দলটির সে সময়ের কোচ হান্সি ফ্লিক বলেছিলেন, ‘আমরা এটাই বোঝাতে চেয়েছি, ফিফা দলগুলোকে চুপ থাকতে বাধ্য করেছে।’

দুই বছর পর কাল উয়েফা নেশনস লিগের ম্যাচের আগে জার্মানির অধিনায়ক কিমিখ আবারও কথা বললেন সেই ঘটনা নিয়ে। বায়ার্ন মিডফিল্ডার অনুশোচনাই করলেন। সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের বিশেষ করে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট মূল্যবোধের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তবে সব সময় রাজনৈতিক মতাদর্শের জানান দেওয়াটা আমাদের কাজ নয়।’

এরপরই কাতার প্রসঙ্গ টেনেছেন কিমিখ, ‘কাতারের বিষয়টার কথাই ধরুন। দল ও দেশ হিসেবে আমরা খুব ভালো কোনো ছবি তুলে ধরতে পারিনি। আমরা রাজনৈতিক মতের প্রকাশ ঘটিয়েছিলাম, আর তাতে বিশ্বকাপের আমেজ একটু হলেও নষ্ট হয়েছিল। আয়োজনের দিক থেকে তো অসাধারণ এক বিশ্বকাপ ছিল সেটি।’

আরও পড়ুনঃসার আমদানির এলসি মার্জিন শিথিল করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

বিশ্বের সব দেশ যে একই মত-পথে চলবে না, সেই উপলব্ধির কথাও বললেন কিমিখ, ‘পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, আমাদের মতাদর্শই সঠিক ও সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য। একটা দেশ হিসেবে আমরা মনে করি, আমাদেরও সমস্যা আছে, আর সেই দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত।’

নিজেদের অতীতে কথাও মনে করিয়ে দিলেন কিমিখ, ‘অতীতে তো আমরা সবকিছু ঠিকঠাক করেনি। আপনি কিছু মূলবোধের পাশে থাকবেন সেটি স্বাভাবিক, তবে রাজনীতি সামলানোর মতো আলাদা লোক তো আমাদের আছেই, তাঁরা এই বিষয়ে বিশেযজ্ঞও। আমি কোনো রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ নই।’

২০৩৪ বিশ্বকাপ সৌদি আরবে হওয়া উচিত কি না, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই কথাগুলো বলেন কিমিখ। ২০৩৪ বিশ্বকাপ সৌদি আরবে হওয়া প্রায় নিশ্চিতই, আয়োজক হওয়ার দৌড়ে যে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিই আছে। আগামী মাসের ফিফা কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করাটাই শুধু বাকি।

আরও পড়ুনসরকার–জামায়াতের সঙ্গে বিরোধে জড়াবে না বিএনপি

সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও অভিবাসী নির্মাণ শ্রমিকদের মানবেতর জীবনের কথা উল্লেখ করেই বিরোধিতা করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সৌদি আরব অবশ্য জোরগলাতেই অস্বীকার করে আসছে এসব অভিযোগ।

কিমিখের আশা উত্তরসূরিরা তাঁদের মতো ভুল করবে না, ‘আমি আশা করছি ১০ বছর পর যেসব ছেলে খেলবে, বিশ্বকাপে তারা খেলাতেই মনোযোগ দেবে। যা–ই হোক না কেন, আমাদের দায়িত্ব তো দলে জায়গা পেলে নিজের সেরাটা দেওয়া। কারণ, ফলের ভিত্তিতেই হয় আমাদের মূল্যায়ন।’

নভেম্বরের উইন্ডোতে নেশনস লিগে দুটি ম্যাচ খেলবে কিমিখের জার্মানি—শনিবার বসনিয়ার বিপক্ষে ও মঙ্গলবার হাঙ্গেরির বিপক্ষে।

 

Exit mobile version