কমলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতি শোধরাতেই হবে
- সময় : ১০:২৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
- / ১৬ বার দেখেছে
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রথম থেকেই সামরিক, রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে এসেছে। এর মধ্য দিয়ে জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে রাশিয়ার গিলে খাওয়া থেকে রক্ষা করেছে। তবে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে দুই পক্ষের যুদ্ধ একটি অচলাবস্থায় আটকে আছে। এটি ইউক্রেনের জন্য মোটেও সুবিধার বিষয় নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস জয়ী হলে তাঁর উচিত হবে এ অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে ইউক্রেনের বিজয় নিশ্চিত করার সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা। রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে সম্প্রতি ইউক্রেনের চমকে দেওয়া আক্রমণ এ ক্ষেত্রে কিছুটা আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির সূচনা বলে বিবেচিত হতে পারে।
ইউক্রেনের লক্ষ্য স্পষ্ট। এই লক্ষ্য হলো সম্পূর্ণ আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার করা; রাশিয়া যে হাজার হাজার শিশুকে অপহরণ করেছে তাদেরসহ সব বাস্তুচ্যুত ইউক্রেনীয় নাগরিকদের নিজের ভিটায় ফিরিয়ে আনা এবং রাশিয়া যে ক্ষতি করেছে, তার ক্ষতিপূরণ আদায় করা। তবে ইউক্রেনের সহায়তায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। বাইডেন প্রশাসন লোকদেখানো দাবি করে যাচ্ছে, ইউক্রেনের পাশে ‘যতক্ষণ দাঁড়ানো দরকার’ ততক্ষণ যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়াবে।
অন্যদিকে কমলা হ্যারিসের রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকারান্তরে ক্রেমলিনের কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করে ‘এক দিনের মধ্যে’ যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কমলা হ্যারিসের জন্য বর্তমান অচলাবস্থা একটি সুযোগ। এ সুযোগ তাঁকে কাজে লাগাতে হবে। দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান ইউক্রেনের বিজয় দেখতে চায়। কমলা ইতিমধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে ব্যাপকভাবে যোগাযোগ করেছেন। তিনি ছয়বার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছেন এবং জুন মাসে সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেন শান্তি সম্মেলনে মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা এত দিন বাইডেনের নেতৃত্ব অনুসরণ করেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন এবং ইউক্রেনকে তিনি একটি বড় বিজয়সূচক ইস্যুতে পরিণত করতে পারেন। কিন্তু ইউক্রেনকে জয়ী করতে হলে পর্যাপ্ত সম্পদ, অস্ত্র সরঞ্জামসহ একটি ব্যাপক কৌশল নিয়ে মাঠে নামতে হবে। বাইডেন প্রশাসনের নীতি (এই নীতি সম্ভবত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ঠিক করেছেন) হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কোনো রকম উসকানি না দিয়ে ইউক্রেনকে টিকে থাকতে সহায়তা করা।
পুতিনের দেওয়া পারমাণবিক হামলা কিংবা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকিবিষয়ক অযৌক্তিক ভয়ের কারণে হোয়াইট হাউস কাল্পনিক একটি রাশিয়ান বিপৎসীমা ঠিক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সেই লাল রেখা অতিক্রম করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি রাশিয়াকে ইউক্রেনে হামলার বিষয়ে বেপরোয়া করে তুলেছে।
বাইডেনের ইউক্রেন নীতির আরেকটি মৌলিক ত্রুটি হলো এই নীতিতে কোনো স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত রাশিয়াকে পরাস্ত করার জন্য ইউক্রেনকে যে ধরনের সহায়তা দেওয়া দরকার, তার সবকিছু সরবরাহ করা।
হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলে তাঁর এমন একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ করা উচিত হবে, যিনি সেই লক্ষ্য পূরণে আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবেন। ইউক্রেনীয়রা সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের মতো করে লড়াই করে যাচ্ছে। তারা বিদেশি সেনা চাইছে না। কিন্তু তাদের দরকার শক্তিশালী অস্ত্র। তাদের দরকার সেসব অস্ত্র রাশিয়ার ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যবহার করার সুযোগ এবং পশ্চিম থেকে আসা পর্যাপ্ত তহবিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতির যেটি সবচেয়ে অযৌক্তিক ত্রুটি, সেটি হলো রাশিয়ার যেসব ঘাঁটি থেকে ইউক্রেনে হামলা চালানো হচ্ছে, সেসব ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। এই নীতি জাতিসংঘের সনদে অন্তর্ভুক্ত আত্মরক্ষার অধিকারের সঙ্গে পর্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত। ইউক্রেনের যুদ্ধ কমলা হ্যারিসের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। তবে তাঁকে অবশ্যই বাইডেনের ভুল সংশোধন করতে হবে এবং রাশিয়াকে পরাজিত করতে ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত রসদ সরবরাহ করতে হবে।
রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এবং মার্কিন মিত্রদের একই কাজ করতে রাজি করিয়ে কমলা আমেরিকানদের ওপর অতিরিক্ত বাজেটের বোঝা চাপানো ছাড়াই ইউক্রেনকে জয়ী হতে সাহায্য করতে পারেন।