আমি একটি উন্নত দেশে এক যুগ গাড়ি চালিয়েছি। এর পর আট বছর ধরে বাংলাদেশে নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করি। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে তুলনা করে আমি যা বুঝি, বাংলাদেশে গাড়ির তুলনায় যে পরিমাণ রাস্তা আছে, সেটি নেহাত কম নয়। গাড়ির গতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের ট্রাফিক সিগন্যালগুলো সক্রিয় করতে হবে।
এমনভাবে লেনগুলো করতে হবে যেন গাড়ি অটোমেটিক লেন ধরে চলাচল করতে পারে। ইউ টার্ন, ডানে-বাঁয়ে গাড়ি ঘোরানো এসব। ট্রাফিক বিভাগে দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় অনেক ল্যাব থাকতে হবে, যেখানে গবেষণা হতে হবে ট্রাফিক সিগন্যাল প্রতিস্থাপনের আগে। রিকশাগুলো ইঞ্জিনচালিত হোক ভালো কথা, তবে রিকশার বডিতে আনতে হবে পরিবর্তন। রিকশা বা অটোরিকশা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমোদনকারী সংস্থা থেকে যাত্রীর ব্যবহার উপযোগী নকশার অনুমোদন নিতে হবে, যার আদলে সেগুলো তৈরি করতে হবে। ইঞ্জিনচালিত গাড়ি হলে ভালো, তখন ট্রাফিক নিয়ম মানতে অসুবিধা হয় না। আর প্যাডেলচাপিত গাড়ি প্রখর রোদে আর সীমাহীন কষ্টে ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে বেশি। মানবিক দিক চিন্তা করে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছাড় দেয় প্যাডেলচালিত রিকশাঅলাদের। অন্যদিকে ট্রাফিকের নিম্নপদের জনবল অমানবিক পরিশ্রম করে রাস্তায় শৃঙ্খলা ধরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু এভাবে কত দিন?
আরো পড়ুনঃ খালেদা জিয়াকে সেনাকুঞ্জে দেখে কাঁদলেন মির্জা ফখরুল
আধুনিক নগরজীবনে এই ট্রাফিকব্যবস্থায় যেমন শহরের যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তেমনই নিম্নপদের ট্রাফিকের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার কমতি হয়। এ ব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের ট্রাফিক সিগন্যালগুলোর সংস্কার করতে হবে। সরকার ল্যাব স্থাপন করে মাঠপর্যায়ে সার্ভে করে সিগন্যালগুলো প্রতিস্থাপন করুক। এতে ট্রাফিক জ্যাম অনেকাংশে ঠিক হয়ে যাবে। বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হবে গাড়ির গতি। ট্রাফিক-কর্মীদের তখন রোদে পুড়ে, গাড়ির ধোঁয়া খেয়ে হাত তুলে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণকারী হতে হবে না। তখন উলটো পথে, কাগজপত্র বিহীন রাস্তার মোড়ে বৈধ-অবৈধ পার্কিংগুলোর শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। এ ছাড়া ট্রাফিক-কর্মীরা তাদের জোনের সব জায়গায় বিচরণ করে এ কাজ উন্নতমানের করতে পারবেন!
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা উচিত বলে মনে করি-
১. শহরগুলোতে অধিক পরিমাণে সরকারি-বেসরকারি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা। সেক্ষেত্রে পার্কিংয়ের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহ জোগানো যেতে পারে। এতে কর্মসংস্থানও হবে অনেকের। কারণ পার্কিংগুলোতে ছোট ছোট ফুড কোর্ট করা যাবে।
২. বড় রাস্তা, পার্ক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাঠে আন্ডারগ্রাউন্ড করে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা। এগুলো অনেক ব্যয়বহুল; কিন্তু পার্কিংয়ের চাহিদা তুঙ্গে। তাই সরকার সহজেই লিজ দিতে পারবে। পার্কিংয়ের চাহিদা দিনের পর দিন শুধুই বাড়বে।
৩. বাস টার্মিনালগুলোকে মাটির নিচে-ওপরে মিলে বহুতল বিশিষ্ট করা যেতে পারে।
৪. রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা যে কোনো ধরনের গাড়ি যেন রাস্তার মোড় ব্লক না করে, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা।
৫. আরেকটা কঠিন কাজ করা যেতে পারে। জানি না, বেঁচে থাকতে এর সমাধান দেখতে পারব কি না। ভ্যানগাড়িমুক্ত রাস্তা এবং ফুটপাত ব্যবসামুক্ত রাখা। ফুটপাত বা রাস্তা ব্যবসার জায়গা নয়। এগুলো বন্ধ করতে পারলে ঢাকায় গাড়ির গতি বেড়ে যাবে। এটা অবশ্য বলার কিছু নেই, সবাই জানেন।
৬. যদি রাস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনা হয়, শুধু ড্রাইভার না আরো কিছু বিষয় আইনের আওতায় আসতে পারে। যেমন-রাস্তার স্ট্রিটলাইট, লেন ও বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালের জন্য সাংকেতিক চিহ্ন স্থাপনকারী সরকারি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। যদি গাড়ি দুর্ঘটনার জায়গায় রাস্তায় স্ট্রিটলাইট, লেন ও বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালের জন্য সাংকেতিক চিহ্ন না থাকে, সংশ্লিষ্টরা যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করতে না পারে, তবে তাকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করতে হবে। ঢাকা