০৮:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের গৌরবময় বাস্তবতা

রিপোর্টার
  • সময় : ০১:০৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১২ বার দেখেছে

১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অভ্যুদয় দেশপ্রেম আর আত্মত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত একটি উপাখ্যান। নির্যাতিত,শোষিত ও বঞ্চিত একটি জাতি আত্মত্যাগের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করে শত্রুর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় বহু কাঙ্ক্ষিত এক স্বাধীনতা। সশস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনারা মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। প্রাথমিকভাবে গেরিলা পদ্ধতিতে ও পরবর্তীতে প্রচলিত পদ্ধতিতেও যুদ্ধ পরিচালিত করে মুক্তিবাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সদস্যদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পর্যুদস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী অবশেষে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বিরুদ্ধে সম্মুখ সমর রণাঙ্গনকে স্মরণ করে যে দিবসগুলো পালিত হয় তার মাঝে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস । ১৯৭১ সালের রক্তঝরা দিনগুলোতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীতে চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত বাঙ্গালী সেনা সদস্যরাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সারীর যোদ্ধা ছিলেন। কর্নেল (পরবর্তীতে জেনারেল) ওসমানী ও অন্যান্য অসীম সাহসী সামরিক কর্মকর্তাদের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় একটি গনপ্রতিরোধ সশস্ত্রযুদ্ধে রূপ নেয়। সশস্ত্রযুদ্ধের চূড়ান্তক্ষনে গেরিলা যুদ্ধের পাশাপাশি কনভেনশনাল বা প্রথাগত যুদ্ধ শুরু করার জন্য ১৯৭১ সালের ‘২১ নভেম্বর’ সেনাবাহিনীর সঙ্গে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী সম্মিলিত ভাবে জল-স্থল ও আকাশ পথে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে। সম্মিলিত বাহিনীর সমন্বিত আক্রমণ শুরু করার সেই ঐতিহাসিক দিনকেই সশস্ত্র বাহিনীর দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন হতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কর্মরত প্রায় ২৬ হাজার প্রশিক্ষিত বাঙালি অফিসার ও সৈনিক বিদ্রোহ করেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এর মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আটটি ব্যাটালিয়ন ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল চালিকাশক্তি । পরবর্তী সময়ে এগিয়ে আসে পূর্ব পাকিস্তানের কর্মরত বাঙালি নৌ অফিসার ও নাবিকেরা, বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা ও বিমানসেনারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার সাধারণ বাঙালি, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা, যাদের যুদ্ধে লড়ার কোনো জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ ছিল না, তারাও বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বার্থে তাদের জীবন ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বিপন্ন করেছিল এবং অকাতরে জীবন দিয়ে রচনা করেছিল দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আরো পড়ুনঃপেঁয়াজ-রসুন ও আলু বীজের দাম আকাশছোঁয়া, দিশেহারা কৃষক
এপ্রিল ১৯৭১ এর শুরু থেকেই বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ধারণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানী শাসকদের স্বপ্ন নস্যাৎ ও তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই সেনাবাহিনী এককভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছে । নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর স্বল্পসংখ্যক সদস্য ছিল বলে গেরিলাযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অধীনেই তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে পরিচালিত হয়েছিল গেরিলা যুদ্ধ, যা প্রচলিত সামরিক যুদ্ধ কৌশলে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং কর্মসম্পাদন ক্ষেত্রেও তা ছিল সমস্যা সংকুল। এই বাহিনীর অকুতোভয় সেনানীরা বীর বাঙ্গালীদের সাথে নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করার মাধ্যমে সেই অসাধ্যই সাধন করেছিলেন। এই কথা নির্দ্বিধায় ও নিঃসঙ্কোচে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চালিকাশক্তি ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর দূরদর্শিতা, দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা এবং তার সামরিক ব্যক্তিত্ব যুদ্ধে জয়ী হতে অনুপ্রাণিত করেছিল। সামরিক অপারেশন পরিচালনার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের সমর্থনও এই যুদ্ধের সামগ্রিক সাফল্য লাভের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল। ২১ নভেম্বর, ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গৌরবময় দিন। এই দিনে বাংলাদেশের সেনা,নৌ ও বিমান সেনাদের সম্মিলিত বাহিনী পাকিস্তানের দখলদার সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা শুরু করে। এই দিনেই বাংলাদেশে সশস্ত্র বাহিনীর আনুষ্ঠানিক জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের ঐতিহাসিক দিনেই মূলত ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের ভিত্তিমূল রচিত হয়েছিল । মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলোকে স্মরণ করে, ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ২১ নভেম্বরের গুরুত্বকে অনুধাবন করে এই দিনটিকে পরম শ্রদ্ধা আর বিনম্র আবহে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’হিসেবে পালন করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা
১। সেনাবাহিনী
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসামান্য অবদান রাখতে সমর্থ হয়। ২৫ শে মার্চের কালো রাতের গণহত্যার পর পরই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ব্যারাকে থাকা বাঙালি অফিসার ও সৈনিকেরা বিদ্রোহ করে। অনেকেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে কেউবা ছুটিতে অবস্থানকালীন থাকার সময় সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। নির্বিচারে গণহত্যার কারণে বাঙালি জাতির হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আর প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষাকে সশস্ত্র সংগ্রামে রূপদানে প্রতিটি প্রশিক্ষিত বাঙালি সৈনিক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ইউনিট এবং ইপিআর সদস্যরা প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।নিজস্ব বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে অমিত সাহস আর দুর্দমনীয় দেশপ্রেমের উদাহরণ সৃষ্টি করে এই বাহিনীর সদস্যরাই সর্বপ্রথম এই জাতীকে স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন দেখিয়েছে।

গণপ্রতিরোধ থেকে সশস্ত্র সংগ্রামে রূপদানের প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল ৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালের ‘তেলিয়াপাড়া সম্মেলন’। সিলেট জেলার হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক বাংলোর সম্মেলনে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনী গুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন ও একটি কেন্দ্রীয় কমান্ডে নিয়ে আসতে বাঙালি অফিসারদের মধ্য থেকে জ্যৈষ্ঠতম অফিসার কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করা হয়।কর্নেল ওসমানী তার প্রজ্ঞা,বিচক্ষণতা ও অসীম সাহসিকতার জন্য সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত দূরদর্শী অফিসার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে তার উপর এই গুরু দায়িত্ব অর্পিত হলে তিনি সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে একটি সশস্ত্র সংগ্রামে রূপদানের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে নিখাদ দেশপ্রেমের ব্রত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঐতিহাসিক এই তেলিয়াপাড়ায় এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে দ্বিতীয় সম্মেলনে তিনি সশস্ত্র যুদ্ধের একটি রুপরেখা উপস্থাপন করেন।সেই রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশকে চারটি(পরবর্তীতে ছয়টি) সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করে সামরিক অফিসারদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনার পরিকল্পনা ও যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়েছিলো।

১৯৭১ সালের ১২ ই জুলাই, মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধ পরিচালনা শুরু করে।পরবর্তীতে সেনাবাহিনী নেতৃত্বে তিনটি নিয়মিত ব্রিগেড গঠন করে মুক্তিযুদ্ধকে আরও বেগবান এবং তেজস্বী করে তোলা হয়। প্রচলিত যুদ্ধ পদ্ধতির বাইরে যেয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধের জন্য সাধারণ জনগণকে একত্রিত করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া,ছোট ছোট উপদলে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাঠানো,গেরিলা যুদ্ধের সামগ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ‘যুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী’র কাঠামো তৈরি ও হানাদার পাকিস্তানি সৈনিকদের অবস্থান এবং রণ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ ভেস্তে দিয়েছিলো।একের পর এক গেরিলা আক্রমণে এবং মিত্র শক্তির সহযোগিতায় সীমান্তবর্তী এলাকা শত্রু মুক্ত হতে শুরু করলে পাক হানাদার বাহিনীর মনোবল সম্পূর্ণ ভেঙে যায়, এই সময় বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনী সারা দেশব্যাপী আক্রমণ আরও জোরদার করে।প্রতিটি সেক্টরে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় মূলত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তথা সশস্ত্র বাহিনীর এক বিজয় গাথারই উপাখ্যান।

আরো পড়ুনঃশাকিবকে জড়িয়ে ধরে ‘ইমোশনাল’ হলেন পরীমণি

২। নৌবাহিনী
বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে নৌবাহিনীর অফিসার ও নাবিকেরা জাতির ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন।এই বাহিনীর নৌ কমান্ডো এবং অন্যান্য সদস্যরা ছোট ছোট অপারেশনের মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনীর নৌ পথে সরবরাহ লাইন ব্যাহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের নৌ বন্দর ও সামুদ্রিক বন্দরে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণাত্মক অভিযান পরিচালনা এবং গেরিলা যুদ্ধসহ অপ্রচলিত কমান্ডো অপারেশনের মাধ্যমে নৌবাহিনী প্রায় ৪৫ টি অপারেশন পরিচালনা করে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরুতেই বাঙালি আটজন নাবিক ফ্রান্সে নির্মাণাধীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর সাবমেরিন পিএনএস ম্যানগ্রো প্রজেক্ট হতে বিদ্রোহ ঘোষণার মাধ্যমে পাকিস্তান নৌ বাহিনী থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের পথিকৃৎ হয়ে আছেন । পরবর্তীতে অনেক নৌসেনা নিয়মিত বাহিনী থেকে পালিয়ে এসে অথবা ছুটিতে অবস্থান কালীন বিদ্রোহ ঘোষণা করে সরাসরি মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়। ১৯৭১ সালে দখলদার বাহিনীর জন্য বন্দর ও পোতাশ্রয়গুলিকে সচল রাখা এবং যোগাযোগের জন্য সমুদ্র লাইন খোলা রাখা অপরিহার্য ছিল। বাংলাদেশ নৌবাহিনী সদস্যরা যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র লাইন অবরুদ্ধ করতে এবং সমুদ্র ও নদী বন্দরগুলিকে নিষ্ক্রিয় করতে লড়াই করেছিল। এর মধ্যে অপারেশন ‘জ্যাকপট’ সবচেয়ে পরিচিত এবং সবচেয়ে সফল অপারেশন গুলির মধ্যে একটি। এ ছাড়াও নৌবাহিনী সদস্যরা নিয়মিত টহলের মাধ্যমে পশুর নদী চ্যানেলে প্রভাব বিস্তার করেছিল । সেনাবাহিনীর যোদ্ধাদের ন্যায় বাঙালি নৌ বাহিনীর সদস্যরাও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন চোরাগোপ্তা ও সাঁড়াশি আক্রমণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নৌ বাহিনীর এই ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

৩। বিমানবাহিনী
১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত অধিকাংশ বাঙালি পাইলট অফিসার এবং এয়ারম্যানরা নিজ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে ৩০০০ জন বাঙালি অফিসার ও এয়ারম্যান কর্মরত ছিলেন যাদের প্রায় ১০০০ সদস্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে নিয়োজিত ছিলেন। যুদ্ধের শুরুতেই তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্তৃক পরিচালিত স্থল যুদ্ধে সরাসরি যোগদান করেন। মূলত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আসা বিমান সেনারা ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের ডিমাপুর বিমানবন্দরে সংগঠিত হয়ে এই বাহিনী তৈরি করেন। ভারতীয় বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ এবং যোধপুর মহারাজা কর্তৃক উপহার হিসেবে পাওয়া একটি ডাকোটা, একটি টুইন ওয়াটার প্লেন ও একটি এলুয়েট হেলিকপ্টার নিয়ে এই বাহিনী যাত্রা শুরু করে। ভারতীয় বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ডিমাপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে বিমান উঠানোর জন্যে উপযোগী করে দেয়ার পর তিনটি উপহার হিসাবে প্রাপ্ত বিমান কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করে যুদ্ধ উপযোগী করা হয়। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার অদম্য ইচ্ছেকে পুঁজি করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ডিসেম্বরের প্রথম দিকে এই তিনটি বিমান সহযোগে ’কিলো ফ্লাইট’পরিচালনা করে। ‘কিলো ফ্লাইট’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে হানাদার বাহিনীর তেলের মজুদ ট্যাংকারে আক্রমণের মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে । ১৯৭১ সালের ২০শে আগস্ট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি বিমান হাইজ্যাক করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদানের জন্য ভারতীয় আকাশ সীমানার দিকে যাত্রা করেছিলেন, পরবর্তীতে বিমানটি পাকিস্তান ও ভারত সীমান্তে অনতি দূরে বিধ্বস্ত হয়। দেশ মাতৃকার প্রয়োজনে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের এই অসীম সাহসী বীরত্বের স্বীকৃত স্বরূপ তাকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু বিমানসেনা তাদের অনবদ্য অবদানের জন্য ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে তাদের নাম খোদাই করে রেখেছেন।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গৌরবময় স্মৃতি স্মরণ করে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ কে অমরত্বের মর্যাদায় যে সমস্ত দিবস পালন করা হয় তার মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর দিবস অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে সামরিক প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত না হলে মাত্র নয় মাসে বিজয় অর্জনের ইতিহাস হয়তো আরও দীর্ঘায়িত হতো। ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সম্মিলিত অংশগ্রহণ মুক্তিযুদ্ধের চিত্রই পাল্টে দিয়েছিল। সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমেই প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছিল। সারা বাংলাদেশে আনাচে-কানাচে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ও বেসামরিক জনগণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিবাহিনীর আদলে গেরিলা যুদ্ধ পাক হানাদার বাহিনীর মনোবলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়, বিএনএস পদ্মা ও বি এন এস পলাশ এই দুই যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী অমিত বিক্রম যাত্রা এবং মাত্র তিনটি বিমান নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুঃসাহসিক সব অভিযান ইতিহাসের পাতায় সশস্ত্রবাহিনীর অবদানকে মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত করেছে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় একই সূত্রে গাথা ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ইতিহাস গৌরবময় অতীতকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।

স্বাধীনতার পর হতে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ২৫ মার্চ সেনাবাহিনী, ১০ ডিসেম্বর নৌবাহিনী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবাহিনী স্বতন্ত্র ভাবে তাদের নিজস্ব বাহিনী দিবস পালন করত। কিন্তু আলাদাভাবে উদযাপন বাদ দিয়ে ১৯৮০ সালে ২১ নভেম্বরে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এটি ১৯৭১ সালের সেই দিনটিকে সামনে নিয়ে আসে, যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক হয়ে আক্রমণ শুরু করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ২১শে নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস`এর তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। মুক্তিযুদ্ধে গোটা সশস্ত্র বাহিনীর যে অসাধারণ লড়াই আর ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে, তাকে স্মরণ রাখতে এই দিবস পালন করা হয়। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ আধুনিক, যুগোপযোগী ও যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতা অর্জনে সচেষ্ট রয়েছে । আধুনিক সমরাস্ত্র, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সেনা নৌ এবং বিমানবাহিনী নিজ নিজ ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছে। তদুপরি আধুনিক যুদ্ধ কৌশল, বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে নিজেদের রণকৌশল নির্ধারণ, প্রশিক্ষণ প্রদান ও আধুনিক সমরাস্ত্র সংযোজন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। এই দিবস দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অবদানকে দেশের আপামর জনগণের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয়। এই দিবসের অঙ্গীকারই যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় ও অটুট বন্ধনের মূলমন্ত্রে পরিণত হয়েছে।

শেয়ার করুন

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের গৌরবময় বাস্তবতা

সময় : ০১:০৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অভ্যুদয় দেশপ্রেম আর আত্মত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত একটি উপাখ্যান। নির্যাতিত,শোষিত ও বঞ্চিত একটি জাতি আত্মত্যাগের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করে শত্রুর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় বহু কাঙ্ক্ষিত এক স্বাধীনতা। সশস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনারা মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। প্রাথমিকভাবে গেরিলা পদ্ধতিতে ও পরবর্তীতে প্রচলিত পদ্ধতিতেও যুদ্ধ পরিচালিত করে মুক্তিবাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সদস্যদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পর্যুদস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী অবশেষে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বিরুদ্ধে সম্মুখ সমর রণাঙ্গনকে স্মরণ করে যে দিবসগুলো পালিত হয় তার মাঝে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস । ১৯৭১ সালের রক্তঝরা দিনগুলোতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীতে চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত বাঙ্গালী সেনা সদস্যরাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সারীর যোদ্ধা ছিলেন। কর্নেল (পরবর্তীতে জেনারেল) ওসমানী ও অন্যান্য অসীম সাহসী সামরিক কর্মকর্তাদের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় একটি গনপ্রতিরোধ সশস্ত্রযুদ্ধে রূপ নেয়। সশস্ত্রযুদ্ধের চূড়ান্তক্ষনে গেরিলা যুদ্ধের পাশাপাশি কনভেনশনাল বা প্রথাগত যুদ্ধ শুরু করার জন্য ১৯৭১ সালের ‘২১ নভেম্বর’ সেনাবাহিনীর সঙ্গে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী সম্মিলিত ভাবে জল-স্থল ও আকাশ পথে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে। সম্মিলিত বাহিনীর সমন্বিত আক্রমণ শুরু করার সেই ঐতিহাসিক দিনকেই সশস্ত্র বাহিনীর দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন হতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কর্মরত প্রায় ২৬ হাজার প্রশিক্ষিত বাঙালি অফিসার ও সৈনিক বিদ্রোহ করেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এর মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আটটি ব্যাটালিয়ন ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল চালিকাশক্তি । পরবর্তী সময়ে এগিয়ে আসে পূর্ব পাকিস্তানের কর্মরত বাঙালি নৌ অফিসার ও নাবিকেরা, বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা ও বিমানসেনারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার সাধারণ বাঙালি, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা, যাদের যুদ্ধে লড়ার কোনো জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ ছিল না, তারাও বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বার্থে তাদের জীবন ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বিপন্ন করেছিল এবং অকাতরে জীবন দিয়ে রচনা করেছিল দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আরো পড়ুনঃপেঁয়াজ-রসুন ও আলু বীজের দাম আকাশছোঁয়া, দিশেহারা কৃষক
এপ্রিল ১৯৭১ এর শুরু থেকেই বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ধারণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানী শাসকদের স্বপ্ন নস্যাৎ ও তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই সেনাবাহিনী এককভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছে । নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর স্বল্পসংখ্যক সদস্য ছিল বলে গেরিলাযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অধীনেই তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে পরিচালিত হয়েছিল গেরিলা যুদ্ধ, যা প্রচলিত সামরিক যুদ্ধ কৌশলে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এবং কর্মসম্পাদন ক্ষেত্রেও তা ছিল সমস্যা সংকুল। এই বাহিনীর অকুতোভয় সেনানীরা বীর বাঙ্গালীদের সাথে নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করার মাধ্যমে সেই অসাধ্যই সাধন করেছিলেন। এই কথা নির্দ্বিধায় ও নিঃসঙ্কোচে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চালিকাশক্তি ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর দূরদর্শিতা, দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা এবং তার সামরিক ব্যক্তিত্ব যুদ্ধে জয়ী হতে অনুপ্রাণিত করেছিল। সামরিক অপারেশন পরিচালনার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের সমর্থনও এই যুদ্ধের সামগ্রিক সাফল্য লাভের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল। ২১ নভেম্বর, ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গৌরবময় দিন। এই দিনে বাংলাদেশের সেনা,নৌ ও বিমান সেনাদের সম্মিলিত বাহিনী পাকিস্তানের দখলদার সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা শুরু করে। এই দিনেই বাংলাদেশে সশস্ত্র বাহিনীর আনুষ্ঠানিক জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের ঐতিহাসিক দিনেই মূলত ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের ভিত্তিমূল রচিত হয়েছিল । মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলোকে স্মরণ করে, ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ২১ নভেম্বরের গুরুত্বকে অনুধাবন করে এই দিনটিকে পরম শ্রদ্ধা আর বিনম্র আবহে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’হিসেবে পালন করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা
১। সেনাবাহিনী
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসামান্য অবদান রাখতে সমর্থ হয়। ২৫ শে মার্চের কালো রাতের গণহত্যার পর পরই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ব্যারাকে থাকা বাঙালি অফিসার ও সৈনিকেরা বিদ্রোহ করে। অনেকেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে কেউবা ছুটিতে অবস্থানকালীন থাকার সময় সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। নির্বিচারে গণহত্যার কারণে বাঙালি জাতির হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আর প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষাকে সশস্ত্র সংগ্রামে রূপদানে প্রতিটি প্রশিক্ষিত বাঙালি সৈনিক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ইউনিট এবং ইপিআর সদস্যরা প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।নিজস্ব বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে অমিত সাহস আর দুর্দমনীয় দেশপ্রেমের উদাহরণ সৃষ্টি করে এই বাহিনীর সদস্যরাই সর্বপ্রথম এই জাতীকে স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন দেখিয়েছে।

গণপ্রতিরোধ থেকে সশস্ত্র সংগ্রামে রূপদানের প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল ৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালের ‘তেলিয়াপাড়া সম্মেলন’। সিলেট জেলার হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক বাংলোর সম্মেলনে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনী গুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন ও একটি কেন্দ্রীয় কমান্ডে নিয়ে আসতে বাঙালি অফিসারদের মধ্য থেকে জ্যৈষ্ঠতম অফিসার কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করা হয়।কর্নেল ওসমানী তার প্রজ্ঞা,বিচক্ষণতা ও অসীম সাহসিকতার জন্য সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত দূরদর্শী অফিসার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে তার উপর এই গুরু দায়িত্ব অর্পিত হলে তিনি সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে একটি সশস্ত্র সংগ্রামে রূপদানের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে নিখাদ দেশপ্রেমের ব্রত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঐতিহাসিক এই তেলিয়াপাড়ায় এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে দ্বিতীয় সম্মেলনে তিনি সশস্ত্র যুদ্ধের একটি রুপরেখা উপস্থাপন করেন।সেই রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশকে চারটি(পরবর্তীতে ছয়টি) সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করে সামরিক অফিসারদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনার পরিকল্পনা ও যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়েছিলো।

১৯৭১ সালের ১২ ই জুলাই, মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধ পরিচালনা শুরু করে।পরবর্তীতে সেনাবাহিনী নেতৃত্বে তিনটি নিয়মিত ব্রিগেড গঠন করে মুক্তিযুদ্ধকে আরও বেগবান এবং তেজস্বী করে তোলা হয়। প্রচলিত যুদ্ধ পদ্ধতির বাইরে যেয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধের জন্য সাধারণ জনগণকে একত্রিত করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া,ছোট ছোট উপদলে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাঠানো,গেরিলা যুদ্ধের সামগ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ‘যুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী’র কাঠামো তৈরি ও হানাদার পাকিস্তানি সৈনিকদের অবস্থান এবং রণ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ ভেস্তে দিয়েছিলো।একের পর এক গেরিলা আক্রমণে এবং মিত্র শক্তির সহযোগিতায় সীমান্তবর্তী এলাকা শত্রু মুক্ত হতে শুরু করলে পাক হানাদার বাহিনীর মনোবল সম্পূর্ণ ভেঙে যায়, এই সময় বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনী সারা দেশব্যাপী আক্রমণ আরও জোরদার করে।প্রতিটি সেক্টরে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় মূলত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তথা সশস্ত্র বাহিনীর এক বিজয় গাথারই উপাখ্যান।

আরো পড়ুনঃশাকিবকে জড়িয়ে ধরে ‘ইমোশনাল’ হলেন পরীমণি

২। নৌবাহিনী
বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে নৌবাহিনীর অফিসার ও নাবিকেরা জাতির ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন।এই বাহিনীর নৌ কমান্ডো এবং অন্যান্য সদস্যরা ছোট ছোট অপারেশনের মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনীর নৌ পথে সরবরাহ লাইন ব্যাহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের নৌ বন্দর ও সামুদ্রিক বন্দরে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণাত্মক অভিযান পরিচালনা এবং গেরিলা যুদ্ধসহ অপ্রচলিত কমান্ডো অপারেশনের মাধ্যমে নৌবাহিনী প্রায় ৪৫ টি অপারেশন পরিচালনা করে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরুতেই বাঙালি আটজন নাবিক ফ্রান্সে নির্মাণাধীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর সাবমেরিন পিএনএস ম্যানগ্রো প্রজেক্ট হতে বিদ্রোহ ঘোষণার মাধ্যমে পাকিস্তান নৌ বাহিনী থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের পথিকৃৎ হয়ে আছেন । পরবর্তীতে অনেক নৌসেনা নিয়মিত বাহিনী থেকে পালিয়ে এসে অথবা ছুটিতে অবস্থান কালীন বিদ্রোহ ঘোষণা করে সরাসরি মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়। ১৯৭১ সালে দখলদার বাহিনীর জন্য বন্দর ও পোতাশ্রয়গুলিকে সচল রাখা এবং যোগাযোগের জন্য সমুদ্র লাইন খোলা রাখা অপরিহার্য ছিল। বাংলাদেশ নৌবাহিনী সদস্যরা যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র লাইন অবরুদ্ধ করতে এবং সমুদ্র ও নদী বন্দরগুলিকে নিষ্ক্রিয় করতে লড়াই করেছিল। এর মধ্যে অপারেশন ‘জ্যাকপট’ সবচেয়ে পরিচিত এবং সবচেয়ে সফল অপারেশন গুলির মধ্যে একটি। এ ছাড়াও নৌবাহিনী সদস্যরা নিয়মিত টহলের মাধ্যমে পশুর নদী চ্যানেলে প্রভাব বিস্তার করেছিল । সেনাবাহিনীর যোদ্ধাদের ন্যায় বাঙালি নৌ বাহিনীর সদস্যরাও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন চোরাগোপ্তা ও সাঁড়াশি আক্রমণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নৌ বাহিনীর এই ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

৩। বিমানবাহিনী
১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত অধিকাংশ বাঙালি পাইলট অফিসার এবং এয়ারম্যানরা নিজ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে ৩০০০ জন বাঙালি অফিসার ও এয়ারম্যান কর্মরত ছিলেন যাদের প্রায় ১০০০ সদস্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে নিয়োজিত ছিলেন। যুদ্ধের শুরুতেই তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্তৃক পরিচালিত স্থল যুদ্ধে সরাসরি যোগদান করেন। মূলত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আসা বিমান সেনারা ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের ডিমাপুর বিমানবন্দরে সংগঠিত হয়ে এই বাহিনী তৈরি করেন। ভারতীয় বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ এবং যোধপুর মহারাজা কর্তৃক উপহার হিসেবে পাওয়া একটি ডাকোটা, একটি টুইন ওয়াটার প্লেন ও একটি এলুয়েট হেলিকপ্টার নিয়ে এই বাহিনী যাত্রা শুরু করে। ভারতীয় বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ডিমাপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে বিমান উঠানোর জন্যে উপযোগী করে দেয়ার পর তিনটি উপহার হিসাবে প্রাপ্ত বিমান কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করে যুদ্ধ উপযোগী করা হয়। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার অদম্য ইচ্ছেকে পুঁজি করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ডিসেম্বরের প্রথম দিকে এই তিনটি বিমান সহযোগে ’কিলো ফ্লাইট’পরিচালনা করে। ‘কিলো ফ্লাইট’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে হানাদার বাহিনীর তেলের মজুদ ট্যাংকারে আক্রমণের মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে । ১৯৭১ সালের ২০শে আগস্ট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি বিমান হাইজ্যাক করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদানের জন্য ভারতীয় আকাশ সীমানার দিকে যাত্রা করেছিলেন, পরবর্তীতে বিমানটি পাকিস্তান ও ভারত সীমান্তে অনতি দূরে বিধ্বস্ত হয়। দেশ মাতৃকার প্রয়োজনে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের এই অসীম সাহসী বীরত্বের স্বীকৃত স্বরূপ তাকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু বিমানসেনা তাদের অনবদ্য অবদানের জন্য ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে তাদের নাম খোদাই করে রেখেছেন।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গৌরবময় স্মৃতি স্মরণ করে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ কে অমরত্বের মর্যাদায় যে সমস্ত দিবস পালন করা হয় তার মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর দিবস অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে সামরিক প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত না হলে মাত্র নয় মাসে বিজয় অর্জনের ইতিহাস হয়তো আরও দীর্ঘায়িত হতো। ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সম্মিলিত অংশগ্রহণ মুক্তিযুদ্ধের চিত্রই পাল্টে দিয়েছিল। সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমেই প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছিল। সারা বাংলাদেশে আনাচে-কানাচে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ও বেসামরিক জনগণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিবাহিনীর আদলে গেরিলা যুদ্ধ পাক হানাদার বাহিনীর মনোবলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়, বিএনএস পদ্মা ও বি এন এস পলাশ এই দুই যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী অমিত বিক্রম যাত্রা এবং মাত্র তিনটি বিমান নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুঃসাহসিক সব অভিযান ইতিহাসের পাতায় সশস্ত্রবাহিনীর অবদানকে মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত করেছে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় একই সূত্রে গাথা ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ইতিহাস গৌরবময় অতীতকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।

স্বাধীনতার পর হতে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ২৫ মার্চ সেনাবাহিনী, ১০ ডিসেম্বর নৌবাহিনী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবাহিনী স্বতন্ত্র ভাবে তাদের নিজস্ব বাহিনী দিবস পালন করত। কিন্তু আলাদাভাবে উদযাপন বাদ দিয়ে ১৯৮০ সালে ২১ নভেম্বরে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এটি ১৯৭১ সালের সেই দিনটিকে সামনে নিয়ে আসে, যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক হয়ে আক্রমণ শুরু করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ২১শে নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস`এর তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। মুক্তিযুদ্ধে গোটা সশস্ত্র বাহিনীর যে অসাধারণ লড়াই আর ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে, তাকে স্মরণ রাখতে এই দিবস পালন করা হয়। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ আধুনিক, যুগোপযোগী ও যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতা অর্জনে সচেষ্ট রয়েছে । আধুনিক সমরাস্ত্র, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সেনা নৌ এবং বিমানবাহিনী নিজ নিজ ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছে। তদুপরি আধুনিক যুদ্ধ কৌশল, বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে নিজেদের রণকৌশল নির্ধারণ, প্রশিক্ষণ প্রদান ও আধুনিক সমরাস্ত্র সংযোজন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। এই দিবস দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অবদানকে দেশের আপামর জনগণের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয়। এই দিবসের অঙ্গীকারই যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় ও অটুট বন্ধনের মূলমন্ত্রে পরিণত হয়েছে।