অসত্য তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়েছিলেন আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ ও জোসেফ
- সময় : ০৬:৪৬:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
- / ৯ বার দেখেছে
সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ২০১৮ সালের ২৫ জুন। ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সময়ে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।
দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গতকাল সোমবার সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে আজিজ আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আজিজ আহমেদ তাঁর ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এ ছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।
সেনাপ্রধান থাকাকালীন সময়েই আজিজ আহমেদের এ সব কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রথম আলোসহ দেশ–বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে অসংখ্য সংবাদ ছাপা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং সহায়তা করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী জোসেফের সাজা মওকুফের আবেদন থেকে শুরু করে দেশত্যাগ পর্যন্ত অসংখ্য সংবাদ প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। অসত্য তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট–শিরোনামে সংবাদটি ছাপা হয়েছিল ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি।
নিজেদের নামের পাশাপাশি মা-বাবার নামও বদল করেছেন বহুল আলোচিত তিন সহোদরের দুজন; হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ। নিজেদের ছবি দিয়ে নতুন নাম আর ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করার সময় ব্যক্তিকে সশরীর হাজির থেকে ছবি তুলতে হয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হারিছ আহমেদ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট নিয়েছেন মোহাম্মদ হাসান নামে। আর জোসেফ নিয়েছেন তানভীর আহমেদ তানজীল নামে। এ ধরনের কাজ জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ও পাসপোর্ট অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাঁদের আরেক ভাই আনিস আহমেদও একই রকম কাজ করেছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হারিছ ও জোসেফ দুটি খুনের মামলায় যথাক্রমে যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। তাঁদের আরেক ভাই আনিস আহমেদ একটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ হারিছ ও আনিসের সাজা মওকুফ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে মা রেনুজা বেগমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জোসেফের সাজা মাফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। জোসেফ তখন কারাগারে ছিলেন।
সম্প্রতি কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্রে হারিছ ও আনিসকে পলাতক আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশেও গত সোমবার পর্যন্ত সবাই জানত তাঁরা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে তাঁদের সাজা মওকুফের বিষয়টি বেরিয়ে আসে এবং গত মঙ্গলবার তা পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশিত হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরও এ বিষয়ে একই তথ্য প্রকাশ করেছে। এই তিন সহোদরের আরেক ভাই সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনিও মঙ্গলবার তাঁর ভাইদের সাজা মাফ পাওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন।
দেশের একাধিক থানা ও আদালতের নথিপত্র, সাজা মওকুফ চেয়ে (জোসেফের জন্য) মায়ের করা আবেদনসহ সাজা মওকুফের সরকারি প্রজ্ঞাপনে হারিছ ও জোসেফের বাবার নাম আব্দুল ওয়াদুদ ও মায়ের নাম রেনুজা বেগম লেখা আছে। কিন্তু হারিছ যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিয়েছেন, তাতে বাবার নাম সুলেমান সরকার এবং মায়ের নাম রাহেলা বেগম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জোসেফের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে বাবার নাম সোলায়মান সরকার এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম লেখা আছে। দুই ভাই পৃথক পৃথক স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।
আদালতের নথি ও সরকারি প্রজ্ঞাপনে হারিছ, আনিস ও জোসেফের ঠিকানা লেখা আছে ডি/৯ নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা ১২০৭। কিন্তু মোহাম্মদ হাসান নামে হারিছের করা জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা বলা হয়েছে মতলব উত্তর উপজেলা, চাঁদপুর। আর বর্তমান ঠিকানা লেখা আছে বাসা নং ২৮, ডি-১ ব্লক, নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়।