আগামী ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিতে কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপিয়ে তা স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা ঠিক কবে নাগাদ সব নতুন বই হাতে পাবে, তা নিয়েও নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছেন না খোদ এনসিটিবি কর্মকর্তারা। এতে বিবর্ণ হওয়ার শঙ্কায় ‘বই উৎসব’।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই ৯৮ লটে ছাপানো হবে, যার মধ্যে ৭০ লটের বই ৪১টি ছাপাখানায় পুরোদমে ছাপার কাজ চলমান। বাকি ২৮ লটের বই ২১ নভেম্বর সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। সেগুলোও দ্রুত ছাপার কাজ শুরু হবে। এছাড়া প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইও ৯৮ লট। ৯৫ লটের বই ছাপার কাজের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের ক্রয় কমিটি। সেগুলো ছাপার কাজ করতে আর কোনো বাধা নেই। বাকি তিন লট ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, ব্রেইল, শিক্ষক সহায়িকাসহ বিশেষ বই।
অন্যদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এবার ২৮ কোটি ৬ লাখ ২২ হাজার ৩৩৭টি বই ছাপানো হবে। বিপুলসংখ্যক এ বই ছাপার কাজই এখনো শুরু করতে পারেনি এনসিটিবি।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, মাধ্যমিকের কোনো শ্রেণির বই এখনো ছাপাখানায় পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে সব শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার হয়েছে। মাধ্যমিকের বইয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো- ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের টেন্ডারের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনুমোদন হলে বই ছাপার কাজ শুরু হবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শুরুতে হয়তো ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ছাপাখানায় পাঠানো হতে পারে। অষ্টম-নবমের বই ছাপাখানায় পাঠাতে আরও দেরি হবে।
আরো পড়ুনঃ দুই যুগ ধরে বন্ধ টাঙ্গাইল কটন মিলস, চুরি হচ্ছে যন্ত্রপাতি
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, জানুয়ারির শুরুতে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে কিছু বই পৌঁছাবে। আর জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব বই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে দিতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। এটা করতে আমরা আমাদের কমিটমেন্ট ও ডেডিকেশনে কোনো ব্যত্যয় ঘটতে দেবো না। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা এখন কাজ করছি, তাদের অনেকে সেপ্টেম্বরের বা অক্টোবরে দায়িত্বে এসেছি। অথচ প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাস থেকে বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত ও টেন্ডারের কাজ শুরু হয়। এবার তা শুরু করতে হয়েছে বলা চলে অক্টোবরে। তাছাড়া শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এসেছে, পাঠ্যবই পরিমার্জন-সংশোধন করতে হয়েছে। টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার দিতে হয়েছে। দেরি হওয়াটা খুবই সঙ্গত। তবে এটুকু আমি বলতে পারি, ধারণার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবো।
অন্যদিকে টেন্ডারের নিয়মে কাজ পাওয়ার পর মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট সময় পান। সেই সময়সীমা মেনে বই ছাপালে এবার জানুয়ারি মাসেও শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান মো. রাব্বানি জব্বার বলেন, এবার সব কাজ দেরিতে হচ্ছে। কাজ পাওয়ার পর বই ডেলিভারি দেওয়ার যে সময়সীমা, তা মেনে কাজ করলে শিক্ষার্থীদের হাতে এনসিটিবি জানুয়ারিতেও বই পাঠাতে পারবে কি না সন্দেহ। আমরা সার্বিক দিক বিবেচনায় দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
জানুয়ারিতে বই দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, জানুয়ারির শুরুতে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে কিছু বই পৌঁছাবে। আর জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব বই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে দিতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। এটা করতে আমরা আমাদের কমিটমেন্ট ও ডেডিকেশনে কোনো ব্যত্যয় ঘটতে দেবো না। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।