০৫:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলাও হচ্ছে

রিপোর্টার
  • সময় : ১১:৪৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • / ২০ বার দেখেছে

গত ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক ১৮৭ জন পুলিশ সদস্যের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে থানায় মামলা করা হচ্ছে। এমনকি তাদের গ্রেপ্তারে আলাদা টিমও গঠন করেছে পুলিশ। তারা যেন বিদেশে পালাতে না পারেন, সে জন্য বাতিল হচ্ছে তাদের অফিশিয়াল পাসপোর্ট।

৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর অনেক পুলিশ সদস্যই কাজে যোগ দেননি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের কাজে যোগদানের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হলেও ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজে যোগ দেননি। পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র বলছে, কাজে যোগ না দিয়ে পলাতক থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ১ জন ডিআইজি, ৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ২ জন পুলিশ সুপার, ১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৫ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৫ জন পুলিশ পরিদর্শক, ১৪ জন এসআই ও সার্জেন্ট, ৯ জন এএসআই, ৭ জন নায়েক এবং ১৩৬ জন কনস্টেবল। পলাতক কনস্টেবলদের মধ্যে দুজন নারী সদস্য রয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই দেশের বাইরে চলে গেছেন এবং তাদের বড় অংশই ভারতে অবস্থান করছেন। সূত্র বলছে, পলাতক পুলিশ সদস্যদের তালিকায় শীর্ষে আছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, যার নামে ৩৮টি মামলা রয়েছে। আরও রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, খন্দকার নুরুন্নবী, এস এম মেহেদী হাসান, সঞ্জিত কুমার রায় ও সুদীপ কুমার চক্রবর্তী; যাদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর একাধিক মামলা করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব পলাতক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের নামে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা এখন আর পুলিশ বাহিনীতে নেই, তারা এখন সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, পলাতক ও চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের অফিশিয়াল পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে; যাতে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তর ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর জানান, পলাতক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবেই প্রথমে বেতন-ভাতা বন্ধ এবং পরে মামলা করা হচ্ছে।

বেতন না হওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পলাতক একজন কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ গত আগস্ট মাসের বেতন পেয়েছেন তিনি। এরপর থেকে কোনো বেতন-ভাতা পাননি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তিনি অফিস করছেন না। তবে ছুটি নিয়ে এখনো চাকরিতে বহাল রয়েছেন। তারপরও তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ হুমায়ূন আহমেদের গল্পে মিঠুন-আফসানা মিমি

পুলিশ সদর দপ্তরের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, যাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা অর্ধেক বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তবে যারা পলাতক, কোনো স্টেশনে যোগদান করেননি, তারা কিছুই পাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যেসব কর্মকর্তা পালিয়ে আছেন, তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশে একটি কমিটি করা হয়েছে; যে কমিটি তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি, মামলা, বেতন-ভাতাসহ সার্বিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে দেখভাল করছে। এই কমিটি তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আলাদা টিম করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।

গণআন্দোলন ও সহিংসতার মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই সারা দেশে থানাসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোয় হামলা হতে থাকে; ভাঙচুর ও লুটপাটও করা হয় অনেক থানা। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৬ পুলিশ সদস্য।

শেয়ার করুন

পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলাও হচ্ছে

সময় : ১১:৪৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

গত ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক ১৮৭ জন পুলিশ সদস্যের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে থানায় মামলা করা হচ্ছে। এমনকি তাদের গ্রেপ্তারে আলাদা টিমও গঠন করেছে পুলিশ। তারা যেন বিদেশে পালাতে না পারেন, সে জন্য বাতিল হচ্ছে তাদের অফিশিয়াল পাসপোর্ট।

৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর অনেক পুলিশ সদস্যই কাজে যোগ দেননি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের কাজে যোগদানের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হলেও ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজে যোগ দেননি। পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র বলছে, কাজে যোগ না দিয়ে পলাতক থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ১ জন ডিআইজি, ৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ২ জন পুলিশ সুপার, ১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৫ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৫ জন পুলিশ পরিদর্শক, ১৪ জন এসআই ও সার্জেন্ট, ৯ জন এএসআই, ৭ জন নায়েক এবং ১৩৬ জন কনস্টেবল। পলাতক কনস্টেবলদের মধ্যে দুজন নারী সদস্য রয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই দেশের বাইরে চলে গেছেন এবং তাদের বড় অংশই ভারতে অবস্থান করছেন। সূত্র বলছে, পলাতক পুলিশ সদস্যদের তালিকায় শীর্ষে আছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, যার নামে ৩৮টি মামলা রয়েছে। আরও রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, খন্দকার নুরুন্নবী, এস এম মেহেদী হাসান, সঞ্জিত কুমার রায় ও সুদীপ কুমার চক্রবর্তী; যাদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর একাধিক মামলা করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব পলাতক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের নামে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা এখন আর পুলিশ বাহিনীতে নেই, তারা এখন সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, পলাতক ও চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের অফিশিয়াল পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে; যাতে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তর ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর জানান, পলাতক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবেই প্রথমে বেতন-ভাতা বন্ধ এবং পরে মামলা করা হচ্ছে।

বেতন না হওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পলাতক একজন কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ গত আগস্ট মাসের বেতন পেয়েছেন তিনি। এরপর থেকে কোনো বেতন-ভাতা পাননি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তিনি অফিস করছেন না। তবে ছুটি নিয়ে এখনো চাকরিতে বহাল রয়েছেন। তারপরও তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ হুমায়ূন আহমেদের গল্পে মিঠুন-আফসানা মিমি

পুলিশ সদর দপ্তরের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, যাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা অর্ধেক বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তবে যারা পলাতক, কোনো স্টেশনে যোগদান করেননি, তারা কিছুই পাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যেসব কর্মকর্তা পালিয়ে আছেন, তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশে একটি কমিটি করা হয়েছে; যে কমিটি তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি, মামলা, বেতন-ভাতাসহ সার্বিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে দেখভাল করছে। এই কমিটি তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আলাদা টিম করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।

গণআন্দোলন ও সহিংসতার মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই সারা দেশে থানাসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোয় হামলা হতে থাকে; ভাঙচুর ও লুটপাটও করা হয় অনেক থানা। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৬ পুলিশ সদস্য।