০৫:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রথমবার জনসমক্ষে বুশরা বিবি, হয়ে উঠলেন ‘আন্দোলনের প্রতীক’

রিপোর্টার
  • সময় : ০৫:১৫:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১ বার দেখেছে

পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি। কারাবন্দী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো এসেছেন জনসমক্ষে, দিচ্ছেন নেতৃত্বও।

বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে বলছে, দুর্নীতিসহ সরকারের করা বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে পাকিস্তানের আদিয়ালা কারাগারে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। তার স্ত্রী বুশরা বিবিও কারাবন্দী ছিলেন। তবে গত মাসে মুক্তি পান তিনি।

স্ত্রীর মুক্তির পর নিজের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কারাগার থেকেই বিক্ষোভের চূড়ান্ত ডাক দেন ইমরান। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাজধানী ইসলামাবাদসহ গোটা দেশেই আন্দোলনে নামে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) নেতাকর্মীরা। এই আন্দোলনে এক চমক হয়ে উঠেছেন বুশরা বিবি।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত সোমবার রাতে এই আন্দোলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদের ডি-চকে জড়ো হয়েছিলেন পিটিআইয়ের ১০ হাজার নেতাকর্মী। কিন্তু সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ আন্দোলনে অংশ নিয়েই প্রথম জনসমক্ষে এলেন সাবেক ফার্স্টলেডি বুশরা বিবি।

লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসমা ফাইজ বলেন, বুশরা বিবিকে অরাজনৈতিক মানুষ মনে করা হতো। সে জন্য বিরোধীরা তাকে হুমকি মনে করতেন না। তবে গত কয়েকদিনে তার ভিন্নরূপ দেখেছি।

এএফপি বলছে, ইসলামাবাদে আন্দোলনের আগে পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করেছিলেন বুশরা। ইসলামাবাদে আন্দোলনকারী ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে হঠাৎ একটি ট্রাকের উপর দেখা যায় তাকে। সেখান থেকে পিটিআই নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বুশরা বিবি বলছিলেন, আজ আপনাদের একটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সেটি হলো ইমরান খান এখানে না আসা পর্যন্ত আপনারা চলে যাবেন না।

এদিকে ওইদিনের আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের জন্য বুশরার এ বক্তব্যকে দুষছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি।

রাজনৈতিক যাত্রাপথে আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার জন্য বুশরা বিবির কাছে গিয়েছিলেন ইমরান খান। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন তারা। সে বছরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান।

আরো পড়ুনঃ মেঝেতে পড়ে ছিল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর লাশ, পাশেই ঝুলছিল স্বামীর লাশ

চার বছর পর ২০২২ সালের এপ্রিলে সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। এরপর চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের কদিন আগে বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ইসলামি আইন ভঙ্গ করে ইমরান খানকে বিয়ের অভিযোগ আনে পাকিস্তান সরকার।

ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ইমরান খানের সঙ্গে বুশরার সম্পর্কের কারণেই বিক্ষোভকারীদের কাছে তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছেন। এই বিক্ষোভকারীরাই সেদিন ইমরানের মুক্তির দাবিতে ইসলামাবাদে বিক্ষোভ করেছেন।

তবে বিক্ষোভে বুশরার ভূমিকা পিটিআইয়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন কুগেলম্যান। এরপরও বুশরার এই ভূমিকা দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে বলেও আশা করেন তিনি।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে হঠাৎ কোনো নারীর সক্রিয় হয়ে ওঠার ঘটনা এবারই প্রথম না। বাবার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সময় থেকে রাজনীতি শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ভাতিজি মারিয়াম নওয়াজ শরিফও এমন হঠাৎ রাজনীতিতে এসেছিলেন বাবা নওয়াজ শরিফ কারাবন্দী হওয়ার পর। এখন দেখার বিষয়, রাজনীতিতে ভুট্টো ও শরিফ পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলা ইমরান খানও এখন বুশরার ঘাড়ে ভর দিয়ে একই পথে হাঁটেন কি না।

শেয়ার করুন

প্রথমবার জনসমক্ষে বুশরা বিবি, হয়ে উঠলেন ‘আন্দোলনের প্রতীক’

সময় : ০৫:১৫:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি। কারাবন্দী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো এসেছেন জনসমক্ষে, দিচ্ছেন নেতৃত্বও।

বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে বলছে, দুর্নীতিসহ সরকারের করা বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে পাকিস্তানের আদিয়ালা কারাগারে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। তার স্ত্রী বুশরা বিবিও কারাবন্দী ছিলেন। তবে গত মাসে মুক্তি পান তিনি।

স্ত্রীর মুক্তির পর নিজের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কারাগার থেকেই বিক্ষোভের চূড়ান্ত ডাক দেন ইমরান। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাজধানী ইসলামাবাদসহ গোটা দেশেই আন্দোলনে নামে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) নেতাকর্মীরা। এই আন্দোলনে এক চমক হয়ে উঠেছেন বুশরা বিবি।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত সোমবার রাতে এই আন্দোলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদের ডি-চকে জড়ো হয়েছিলেন পিটিআইয়ের ১০ হাজার নেতাকর্মী। কিন্তু সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ আন্দোলনে অংশ নিয়েই প্রথম জনসমক্ষে এলেন সাবেক ফার্স্টলেডি বুশরা বিবি।

লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসমা ফাইজ বলেন, বুশরা বিবিকে অরাজনৈতিক মানুষ মনে করা হতো। সে জন্য বিরোধীরা তাকে হুমকি মনে করতেন না। তবে গত কয়েকদিনে তার ভিন্নরূপ দেখেছি।

এএফপি বলছে, ইসলামাবাদে আন্দোলনের আগে পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করেছিলেন বুশরা। ইসলামাবাদে আন্দোলনকারী ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে হঠাৎ একটি ট্রাকের উপর দেখা যায় তাকে। সেখান থেকে পিটিআই নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বুশরা বিবি বলছিলেন, আজ আপনাদের একটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সেটি হলো ইমরান খান এখানে না আসা পর্যন্ত আপনারা চলে যাবেন না।

এদিকে ওইদিনের আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের জন্য বুশরার এ বক্তব্যকে দুষছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি।

রাজনৈতিক যাত্রাপথে আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার জন্য বুশরা বিবির কাছে গিয়েছিলেন ইমরান খান। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন তারা। সে বছরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান।

আরো পড়ুনঃ মেঝেতে পড়ে ছিল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর লাশ, পাশেই ঝুলছিল স্বামীর লাশ

চার বছর পর ২০২২ সালের এপ্রিলে সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। এরপর চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের কদিন আগে বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ইসলামি আইন ভঙ্গ করে ইমরান খানকে বিয়ের অভিযোগ আনে পাকিস্তান সরকার।

ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ইমরান খানের সঙ্গে বুশরার সম্পর্কের কারণেই বিক্ষোভকারীদের কাছে তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছেন। এই বিক্ষোভকারীরাই সেদিন ইমরানের মুক্তির দাবিতে ইসলামাবাদে বিক্ষোভ করেছেন।

তবে বিক্ষোভে বুশরার ভূমিকা পিটিআইয়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন কুগেলম্যান। এরপরও বুশরার এই ভূমিকা দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে বলেও আশা করেন তিনি।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে হঠাৎ কোনো নারীর সক্রিয় হয়ে ওঠার ঘটনা এবারই প্রথম না। বাবার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সময় থেকে রাজনীতি শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ভাতিজি মারিয়াম নওয়াজ শরিফও এমন হঠাৎ রাজনীতিতে এসেছিলেন বাবা নওয়াজ শরিফ কারাবন্দী হওয়ার পর। এখন দেখার বিষয়, রাজনীতিতে ভুট্টো ও শরিফ পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলা ইমরান খানও এখন বুশরার ঘাড়ে ভর দিয়ে একই পথে হাঁটেন কি না।