আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর অসংখ্য রক্তনালি জালের মতো বিস্তৃত হয়ে রক্ত সরবরাহ করে। একেকটি রক্তনালি ভাগ হয়ে দুটি শাখায় পরিণত হয়। রক্ত চলাচলের সময় ভাগ হওয়া অংশে রক্তের চাপ পড়ে বেশি। এ কারণে রক্তনালির এ অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। চাপ বেশি বেড়ে গেলে এ দুর্বল অংশ ফুলে যায়। একে বলে অ্যানিউরিজম। একসময় অ্যানিউরিজম ফেটে যায় ও মস্তিষ্কের আবরণীর মধ্যে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে। একে বলে সাব-অ্যারাকনয়েড হেমোরেজ। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের একটি অন্যতম কারণ এই অ্যানিউরিজম।
এ রোগ প্রাণঘাতী। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ থেকে ২০ শতাংশ মারা যান হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই। আরও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মারা যান এক মাসের মধ্যে। আর যাঁরা বেঁচে থাকেন, তাঁরা নানা শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত থাকেন।
কারণ
এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যার কারণে ফুলে যাওয়া রক্তনালি ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঝুঁকিগুলো হলো ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, পরিবারে এ রোগের ইতিহাস, মদপান ও কিডনির রোগ। এ বিশেষ ধরনের কিডনি রোগে পুরো কিডনিতে অনেক সিস্ট হয়। কিডনি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিডনির সঙ্গে লিভার বা অন্যান্য অঙ্গেও সিস্ট হতে পারে। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের রক্তনালি ফুলে গিয়ে অ্যানিউরিজম হয়।
লক্ষণ
● প্রধান লক্ষণ, তীব্র মাথাব্যথা। আকস্মিক ব্যথা শুরু হয়ে কিছু সময়ের মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করে।
● মাথাব্যথার সঙ্গে বমি হতে পারে, আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।
● ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
● শরীরের কোনো পাশ অবশ হতে পারে।
● চোখে দেখার সমস্যা তৈরি হয়।
রোগনির্ণয়
শুরুতে মাথার সিটিস্ক্যান করা হয়। তবে রক্তক্ষরণ কম হলে সিটিস্ক্যানে এ রোগ ধরা না-ও পড়তে পারে। এমন হলে নিউরোলজিস্টরা পিঠের হাড়ের মধ্যকার নির্যাস নিয়ে পরীক্ষা করে রোগনির্ণয় করেন। প্রয়োজনে মস্তিষ্কের অ্যানজিওগ্রাম করতে হয়।
চিকিৎসা
● অ্যানিউরিজমের আধুনিক চিকিৎসা হলো কয়েল এমবোলাইজেশন। এ অস্ত্রোপচারে মাথা কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন পড়ে না। রোগী দু-চার দিনেই সুস্থ হয়ে যান।
●দ্বিতীয় চিকিৎসা, মাথায় অস্ত্রোপচার করা। এ ক্ষেত্রে মাথা কেটে অ্যানিউরিজম খুঁজে বের করে ক্লিপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।