১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেওয়ারিশ লাশ শনাক্তকরণে উদ্যোগ নেওয়া হোক

রিপোর্টার
  • সময় : ০৭:৩৫:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৫ বার দেখেছে

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। সেই আন্দোলন ঠেকাতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে শেখ হাসিনা সরকার। ফলে দেশের ইতিহাসে কোনো আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গুরুতরভাবে আহত হন বিপুলসংখ্যক মানুষ। আবার এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ। অন্যদিকে শনাক্তহীন অবস্থায় কয়েকজনের লাশ পড়ে আছে হাসপাতালের মর্গে। নিখোঁজদের খোঁজে স্বজনেরা হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরলেও বেওয়ারিশ লাশগুলোর কোনো দাবিদার পাওয়া যাচ্ছে না।

আন্দোলনের সময় ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হতাহত মানুষের চাপ তৈরি হয়। পত্রিকান্তরে জানা যায়, অনেক লাশ স্বজনদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনো ময়নাতদন্ত ছাড়া। আবার কিছু লাশ নথিভুক্তও করা সম্ভব হয়নি। স্বজনেরাও যেকোনো প্রকারে লাশ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, দেরি হলে যদি সেটিও পাওয়া না যায়, এই আশঙ্কায়। স্বজন হারানোর পর লাশটাও যদি পাওয়া না যায়, এর চেয়ে করুণ আর কী হতে পারে। লাশ পাওয়া গেলে তা-ও একটা সান্ত্বনা পাওয়া যায়, কিন্তু বেওয়ারিশ হয়ে গেলে সারা জীবন সেই বেদনা বয়ে বেড়াতে হয়। এ ছাড়া বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন, তা নিয়েও তৈরি হয় নানা অনিশ্চয়তা।

প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে তিনটি লাশ। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে আটটি মরদেহ পড়ে আছে। লাশগুলো হাসপাতাল দুটিতে আনা হয় ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে। তাঁদের প্রত্যেকের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এসব মরদেহের কোনো পরিচয়, ঠিকানা বা দাবিদার পাওয়া যায়নি। এমনকি ওই সময় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। লাশগুলো শনাক্তকরণে হাসপাতাল দুটির কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সৎকারের প্রয়োজনে ওই বেওয়ারিশ মরদেহ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছে তারা। কারণ, লাশগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সেগুলোর সৎকার হওয়া প্রয়োজন।

বেওয়ারিশগুলোর লাশগুলোর কোনো দাবিদার পাওয়া না গেলে আমরা আশা করব সৎকারের আগে সেসব মানুষের ছবি তুলে রাখা হবে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। সৎকারের পরও তাঁদের শনাক্ত করার অন্তত একটি সুযোগ থাকবে স্বজনদের। এদিকে অনেক মানুষ নিখোঁজ আছেন। স্বজনদের ভাষ্যমতে, তাঁদের কেউ কেউ আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে এখনো ফেরেননি। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থীও রয়েছেন। তাঁদের সন্ধান পাওয়া জরুরি। বেওয়ারিশ লাশগুলোর শনাক্তকরণ ও নিখোঁজ মানুষদের খোঁজ পেতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আশা করি, এ ব্যাপারে নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবে।

ট্যাগ :

শেয়ার করুন

বেওয়ারিশ লাশ শনাক্তকরণে উদ্যোগ নেওয়া হোক

সময় : ০৭:৩৫:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। সেই আন্দোলন ঠেকাতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে শেখ হাসিনা সরকার। ফলে দেশের ইতিহাসে কোনো আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গুরুতরভাবে আহত হন বিপুলসংখ্যক মানুষ। আবার এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ। অন্যদিকে শনাক্তহীন অবস্থায় কয়েকজনের লাশ পড়ে আছে হাসপাতালের মর্গে। নিখোঁজদের খোঁজে স্বজনেরা হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরলেও বেওয়ারিশ লাশগুলোর কোনো দাবিদার পাওয়া যাচ্ছে না।

আন্দোলনের সময় ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হতাহত মানুষের চাপ তৈরি হয়। পত্রিকান্তরে জানা যায়, অনেক লাশ স্বজনদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনো ময়নাতদন্ত ছাড়া। আবার কিছু লাশ নথিভুক্তও করা সম্ভব হয়নি। স্বজনেরাও যেকোনো প্রকারে লাশ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, দেরি হলে যদি সেটিও পাওয়া না যায়, এই আশঙ্কায়। স্বজন হারানোর পর লাশটাও যদি পাওয়া না যায়, এর চেয়ে করুণ আর কী হতে পারে। লাশ পাওয়া গেলে তা-ও একটা সান্ত্বনা পাওয়া যায়, কিন্তু বেওয়ারিশ হয়ে গেলে সারা জীবন সেই বেদনা বয়ে বেড়াতে হয়। এ ছাড়া বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন, তা নিয়েও তৈরি হয় নানা অনিশ্চয়তা।

প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে তিনটি লাশ। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে আটটি মরদেহ পড়ে আছে। লাশগুলো হাসপাতাল দুটিতে আনা হয় ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে। তাঁদের প্রত্যেকের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এসব মরদেহের কোনো পরিচয়, ঠিকানা বা দাবিদার পাওয়া যায়নি। এমনকি ওই সময় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। লাশগুলো শনাক্তকরণে হাসপাতাল দুটির কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সৎকারের প্রয়োজনে ওই বেওয়ারিশ মরদেহ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছে তারা। কারণ, লাশগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সেগুলোর সৎকার হওয়া প্রয়োজন।

বেওয়ারিশগুলোর লাশগুলোর কোনো দাবিদার পাওয়া না গেলে আমরা আশা করব সৎকারের আগে সেসব মানুষের ছবি তুলে রাখা হবে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। সৎকারের পরও তাঁদের শনাক্ত করার অন্তত একটি সুযোগ থাকবে স্বজনদের। এদিকে অনেক মানুষ নিখোঁজ আছেন। স্বজনদের ভাষ্যমতে, তাঁদের কেউ কেউ আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে এখনো ফেরেননি। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থীও রয়েছেন। তাঁদের সন্ধান পাওয়া জরুরি। বেওয়ারিশ লাশগুলোর শনাক্তকরণ ও নিখোঁজ মানুষদের খোঁজ পেতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আশা করি, এ ব্যাপারে নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবে।