ভাঙা ছাদ থেকে প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। কোথাও কোথাও বেরিয়ে আছে রড। বৃষ্টি এলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ছাদের পাশাপাশি ফাটল ধরেছে দেওয়াল, পিলার ও বিমেও। সামান্য খোঁচা দিলেই পলেস্তারা ঝুরঝুরিয়ে পড়তে থাকে।
এমন চিত্র শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া এলাকায় অবস্থিত ৪৯ নম্বর আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনে। এর মধ্যেই ভবন ধসের ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের পাঠদান করেন শিক্ষকরা। সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় মা-বাবাকেও।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ ভাঙা ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বেরিয়ে আছে। আছে বৃষ্টিতে পানি পরার ছোপ-ছোপ দাগ। কক্ষের দেওয়াল, ছাদ, পিলার ও বিমে ফাটল ধরেছে। এ অবস্থায় জরাজীর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় আড়াইশ কোমলমতি শিশু ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৭ সালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ৪৯ নম্বর আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বর্তমানে এখানে পড়ছে ২৩১ জন শিক্ষার্থী। তাদের বিপরীতে শিক্ষকসংখ্যা ১০ জন। বিদ্যালয়টির শুরুর দিকে একটি আধপাকা ভবন ছিল। ১৯৮৯ সালে পাঁচ কক্ষের দ্বিতল ভবনটি তৈরি করে প্রাথমিক শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেই ভবনটিই এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো সমাধান মেলেনি বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন মমতা-প্রিয়াঙ্কা
এসব আতঙ্কের কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারছেন না বলে জানান সহকারী শিক্ষকরা। তাদের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি তাদের উপস্থিতিও কমছে।
প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন মিয়ার মা রেহানা আক্তার জানান, বিদ্যালয় ভবনের ওপরে ফাটল ধরেছে। রডও দেখা যায়। বাচ্চাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে বাড়িতে থাকতে হয় তাকে।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলে যে ওপর থেকে নিচে নামবে দ্রুত, এমন অবস্থাও নেই। শিশুদের কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
প্রথম শ্রেণির ছাত্রী তনুশ্রী বিশ্বাস পিউ বলে, আমাদের স্কুলের ওপর দিক দিয়ে ভাঙা। বর্ষাকালে জল পড়ে, বালু পড়ে। আমাদের ক্লাস করতে ভীষণ ভয় করে। আমরা চাই, নতুন স্কুল তৈরি করা হোক।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলে, যখন ক্লাস করি, তখন অনেক সময় ওপর থেকে বালু আর ইটের কণা পড়ে। গতকালও (বুধবার) আমার মাথায় খোয়া পড়েছে। এভাবে ক্লাস করা খুবই কষ্টের। সরকার যেন দ্রুত তাদের বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন করে দেয়, সেই আকুতি জানায় জেরিন।
সহকারী শিক্ষিকা আসমা আকতার বলেন, আমাদের ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক। আমরা ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারছি না। এর আগেও ওপর থেকে ছাদ ভেঙে ফ্যান পড়ে গিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আমরা সবাই আতঙ্কে থাকি। তা ছাড়া বৃষ্টির দিনে পানি পড়তে থাকে। ক্লাস নিতে পারি না। শিশুদের বই-খাতা ভিজে যায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান তিনি।
ইউনূস শেখ নামের আরেক সহকারী শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করতে হয় বলে ওদের পড়ায় মনোযোগ থাকে না। এমনিতে বিদ্যালয়ে পড়ার পরিবেশ ভালো। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের একটি ভবন দরকার।
এ সমস্যার কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি বলে জানান প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম। তার ভাষ্য, দোতলা ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ আমাদের এভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কেন সমাধান হচ্ছে না– এমন প্রশ্নের উত্তর তাঁরও অজানা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হক বলেন,ওই বিদ্যালয়ে ভবনের জন্য বরাদ্দ এসেছিল। কোনো কারণে সেই বরাদ্দ বাতিল হয়ে যায়। কী কারণে তা বাতিল হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা ও নতুন বরাদ্দে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
নুরুল হক আরও বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। এগুলো একটি ডেটাবেজের অন্তর্ভুক্ত। যখন বরাদ্দ আসে, তখনই আমরা সহযোগিতা করি।