কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘পাল্টা কমিটি’
- সময় : ০৪:৩১:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
- / ১৩ বার দেখেছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কুমিল্লা মহানগর কমিটিকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছে কিছু শিক্ষার্থী।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে ১৬ সদস্যদের এ কমিটি ঘোষণা করেন কুমিল্লা নগরের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কমিটির নেতৃবৃন্দের আশা- যারা এসব কার্যক্রম করেছেন, তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করবেন।
একইদিন বিকাল ৪টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ করা হয়। ১৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু রায়হান এবং সদস্য সচিব করা হয় মুহাম্মদ রাশেদুল হাসানকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেলের স্বাক্ষরে আগামী ছয় মাসের জন্য এই কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃজাবিতে রাচির মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা
পরে কেন্দ্র থেকে ঘোষিত ওই কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন কমিটিতে পদবঞ্চিতরা। তারা রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কেন্দ্র ঘোষিত ওই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দ আজহারুল আমিনকে আহ্বায়ক এবং একই কলেজের ফাতিন ইশরাক মোল্লাকে সদস্য সচিব করে ১৬ সদস্য পাল্টা মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে তালহা জোবায়েরকে মুখ্য সংগঠক ও নাইমুজ্জামানকে মুখপাত্র করা হয়েছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে শহরের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সৈয়দ আজহারুল আমিন বলেন, ‘আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঘোষিত কমিটিতে সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। শনিবার বিকালে যারা এই কমিটির ঘোষণা দিয়েছেন, আমি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশ্ন রাখলাম- এই কমিটি আপনারা কিভাবে ঘোষণা দিলেন? যারা আন্দোলনের সময় নিজের জীবন বাজি রেখেছিল, তাদের কাউকে তো আমি এখানে দেখছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সম্মুখসারিতে ছিলাম তাদেরকেও বঞ্চিত করা হয়েছে এই কমিটিতে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।’
ফাতিন ইশরাক মোল্লা বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমাদের যাদেরকে সমন্বয়ক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে নবগঠিত এই কমিটিতে দশজনকে রাখা হয়েছে কি-না আমাদের সন্দেহ রয়েছে। আমরা এই কমিটি মানি না। তাই আমরা নিজেরাই কমিটি গঠন করেছি।’
এদিকে কেন্দ্র ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, কুমিল্লায় গত ৪ আগস্ট আলেখারচর বিশ্বরোডে ‘ছাড়তে হবে ক্ষমতা, ঢাকা আসছে জনতা’ আমিই ঘোষণা দিই। আমি জানি কুমিল্লায় কে-কোথায় আন্দোলন করেছে, কার কতটুকু অবদান।
তিনি আরও বলেন, সৈয়দ আজহারুল আমিন কুমিল্লা জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। নাইম জামান কুমিল্লা জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক। সংবাদ সম্মেলনের নেতৃত্বদানকারী আরেক শিক্ষার্থী রুবেল মজুমদার ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া অন্যরা সবাই ছাত্রদলের বিভিন্ন শ্রেণীর সক্রিয় কর্মী। আমরা চাই যে কোনো মানুষ স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক চর্চাটা অব্যাহত রাখুক। আশা করি যারা এ সকল কার্যক্রম করছে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করবে।
কেন্দ্রঘোষিত কুমিল্লা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, আমরা এ ঘটনার কোনো প্রতিবাদ করতে চাই না। কারণ, আমাদের কোনো রকম সংঘর্ষে জড়ানোর ইচ্ছা নেই। আমাদের কমিটিতে ১৯৩ জন জায়গা পেয়েছে। যে ১৬ জন কমিটি ঘোষণা করলো, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ১৯৩ জনের জায়গা হলে কেন ১৬ জনকে নেওয়া হলো না?
তিনি আরও বলেন, গতকাল যারা পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন- তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। কিন্তু আমাদের কমিটিতে কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী রাখার নিয়ম নেই। এই নিয়ম কেন্দ্র থেকে ঘোষিত। তার ভিত্তিতে আমাদের ১৯৩ জনের কমিটি সাজানো হয়েছে।
রাশেদুল আরও বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নই। আমরা সবাইকে নিয়ে দেশ সংস্কারের কাজ করতে চাই। ওরা চাইলে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে।