০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অকৃষি লিজকৃত ভূমির নামজারি ও খাজনা নেওয়ার দাবি

রিপোর্টার
  • সময় : ০৪:০৯:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১৩ বার দেখেছে

দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তীয় অকৃষি খাসমহল ভূমির হস্তান্তর প্রক্রিয়া দ্রুততর ও সহজ করতে ২০০৫ ও ২০১১ সালের পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপন বহালের মাধ্যমে নামজারি ও খাজনা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন পুরানা পল্টন ও সেগুনবাগিচা খাসমহল ভূমির ভুক্তভোগী মালিক কমিটি। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

এ সময় সংগঠনের সভাপতি আবু খালিদ মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ লিখিত বক্তৃতায় বলেন, ১৯২৪ সালে পল্টন ও সেগুনবাগিচাসহ ঢাকার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসতি গড়ে তোলার জন্য অকৃষি পতিত জমিসমূহ দীর্ঘমেয়াদী লিজ বরাদ্দ দেন তৎকালীন সরকার। তারপর ১৯৫৪ সালে ভূমি মালিকরা প্রথমবার তা নবায়ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়, পূর্বতন খাসমহলের চিরন্তন নবায়নযোগ্য দীর্ঘমেয়াদী লিজকৃত অকৃষি খাস জমিসমূহ স্থায়ী বন্দোবস্ত বলে বিবেচিত হবে এবং ভবিষ্যতে তা আর নবায়নের প্রয়োজন হবে না। পরবর্তীতে ২০ বছর পর ভূমি মালিক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর অজ্ঞাতসারে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে ২০০৫ সালে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অথচ এই ২০ বছরে প্রায় প্রতিটি ভূমি মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্নভাবে বিবর্তন করা হয়।

আরো পড়ুনঃ কঠিন পরীক্ষায় ব্রাজিল, চোটে জর্জরিত আর্জেন্টিনার নজর জয়ে
কিন্তু যারা লিজ নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন, তা আর নবায়নের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে লিখিতভাবে জানানো হয়। সিটি জরিপের সময় এস.এ. ও আর.এস. নামজারি পর্চামূলে জমির মালিকের নামে রেকর্ডমূলে ভূমি বা ফ্ল্যাট মালিকগণ নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে নির্মিত ফ্ল্যাট বা অফিসগুলো সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে যথারীতি বেচা-কেনাসহ যাবতীয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলে এবং সরকারের পক্ষ থেকে ওজর আপত্তি ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব ভূমিতে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য রাজউক থেকে নকশা অনুমোদনের সময়েও কোন আপত্তি করা হয়নি। এরপর ২০১১ সালে ২টি সম্পূরক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার উক্ত জমির খাজনা গ্রহণ এবং সকল ধরনের হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়; ফলে লিজ সূত্রে ভূমি মালিকগণের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার বর্তমানে অনেকে গোপনে স্টাম্পের মাধ্যমে বেচা-কেনা করছে বলে জানান তারা।

ভুক্তভোগী মালিকরা জানান, ১৯৮৫ সালের পরিপত্র বাতিল করায় ভূমি, ফ্ল্যাট,অফিস স্পেস বিক্রি না হওয়ায় অনেক ভূমিতে ডেভেলপার কর্তৃক ভবন নির্মিত হয়, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন কার্যত বন্ধ থাকায় ফ্ল্যাট ক্রেতাগণ অর্থ পরিশোধ করছেন না, ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে গৃহায়ণ ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে প্রজেক্টের কাজও শেষ হচ্ছে না। এতে ভূমির মালিক বাড়ি ছাড়া হয়ে ভাড়া আয় থেকে বঞ্চিত, ফ্ল্যাট মালিকরা তাদের জীবনের সঞ্চয়টুকু ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেও ফ্ল্যাট পজিশন বুঝে পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় নামজারি-খাজনা করাতে পারছেন না। ২০০৫ ও ২০১১ সালে জারিকৃত পরিপত্রের মাধ্যমে তৎকালীন সরকার দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিককে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও বিভিন্ন আইনি জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। মতিঝিল, পল্টন, সেগুনবাগিচা, রমনা, কাকরাইল, ওয়ারী, গেন্ডারিয়াসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তীয় খাসমহল ভূমির মালিকরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন, বর্তমানে নিজের ভিটি-ভূমিতেই উদ্বাস্তু অবস্থায় আছেন। তাই অবিলম্বে ২০০৫ সাল ও ২০১১ সালের সকল পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বহাল রেখে অত্র লিজকৃত ভূমিগুলোর নামজারি ও খাজনা পরিশোধের ব্যবস্থা করে নির্বাহী আদেশ প্রদানের মাধ্যমে এ বিশাল ভুক্তভোগী জনমানুষকে অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বর্তমান সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।

আরো পড়ুনঃসপ্তাহের ব্যবধানে পটিয়ায় ২১ গরু লুট, শঙ্কায় খামারিরা
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি আবু জামাল সাঈদ আহমেদ, খন্দকার আবদুর রব ও হাজী ওসমান গণি, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

শেয়ার করুন

অকৃষি লিজকৃত ভূমির নামজারি ও খাজনা নেওয়ার দাবি

সময় : ০৪:০৯:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তীয় অকৃষি খাসমহল ভূমির হস্তান্তর প্রক্রিয়া দ্রুততর ও সহজ করতে ২০০৫ ও ২০১১ সালের পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপন বহালের মাধ্যমে নামজারি ও খাজনা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন পুরানা পল্টন ও সেগুনবাগিচা খাসমহল ভূমির ভুক্তভোগী মালিক কমিটি। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

এ সময় সংগঠনের সভাপতি আবু খালিদ মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ লিখিত বক্তৃতায় বলেন, ১৯২৪ সালে পল্টন ও সেগুনবাগিচাসহ ঢাকার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসতি গড়ে তোলার জন্য অকৃষি পতিত জমিসমূহ দীর্ঘমেয়াদী লিজ বরাদ্দ দেন তৎকালীন সরকার। তারপর ১৯৫৪ সালে ভূমি মালিকরা প্রথমবার তা নবায়ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়, পূর্বতন খাসমহলের চিরন্তন নবায়নযোগ্য দীর্ঘমেয়াদী লিজকৃত অকৃষি খাস জমিসমূহ স্থায়ী বন্দোবস্ত বলে বিবেচিত হবে এবং ভবিষ্যতে তা আর নবায়নের প্রয়োজন হবে না। পরবর্তীতে ২০ বছর পর ভূমি মালিক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর অজ্ঞাতসারে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে ২০০৫ সালে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অথচ এই ২০ বছরে প্রায় প্রতিটি ভূমি মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্নভাবে বিবর্তন করা হয়।

আরো পড়ুনঃ কঠিন পরীক্ষায় ব্রাজিল, চোটে জর্জরিত আর্জেন্টিনার নজর জয়ে
কিন্তু যারা লিজ নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন, তা আর নবায়নের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে লিখিতভাবে জানানো হয়। সিটি জরিপের সময় এস.এ. ও আর.এস. নামজারি পর্চামূলে জমির মালিকের নামে রেকর্ডমূলে ভূমি বা ফ্ল্যাট মালিকগণ নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে নির্মিত ফ্ল্যাট বা অফিসগুলো সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে যথারীতি বেচা-কেনাসহ যাবতীয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলে এবং সরকারের পক্ষ থেকে ওজর আপত্তি ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব ভূমিতে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য রাজউক থেকে নকশা অনুমোদনের সময়েও কোন আপত্তি করা হয়নি। এরপর ২০১১ সালে ২টি সম্পূরক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার উক্ত জমির খাজনা গ্রহণ এবং সকল ধরনের হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়; ফলে লিজ সূত্রে ভূমি মালিকগণের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার বর্তমানে অনেকে গোপনে স্টাম্পের মাধ্যমে বেচা-কেনা করছে বলে জানান তারা।

ভুক্তভোগী মালিকরা জানান, ১৯৮৫ সালের পরিপত্র বাতিল করায় ভূমি, ফ্ল্যাট,অফিস স্পেস বিক্রি না হওয়ায় অনেক ভূমিতে ডেভেলপার কর্তৃক ভবন নির্মিত হয়, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন কার্যত বন্ধ থাকায় ফ্ল্যাট ক্রেতাগণ অর্থ পরিশোধ করছেন না, ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে গৃহায়ণ ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে প্রজেক্টের কাজও শেষ হচ্ছে না। এতে ভূমির মালিক বাড়ি ছাড়া হয়ে ভাড়া আয় থেকে বঞ্চিত, ফ্ল্যাট মালিকরা তাদের জীবনের সঞ্চয়টুকু ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেও ফ্ল্যাট পজিশন বুঝে পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় নামজারি-খাজনা করাতে পারছেন না। ২০০৫ ও ২০১১ সালে জারিকৃত পরিপত্রের মাধ্যমে তৎকালীন সরকার দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিককে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও বিভিন্ন আইনি জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। মতিঝিল, পল্টন, সেগুনবাগিচা, রমনা, কাকরাইল, ওয়ারী, গেন্ডারিয়াসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তীয় খাসমহল ভূমির মালিকরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন, বর্তমানে নিজের ভিটি-ভূমিতেই উদ্বাস্তু অবস্থায় আছেন। তাই অবিলম্বে ২০০৫ সাল ও ২০১১ সালের সকল পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বহাল রেখে অত্র লিজকৃত ভূমিগুলোর নামজারি ও খাজনা পরিশোধের ব্যবস্থা করে নির্বাহী আদেশ প্রদানের মাধ্যমে এ বিশাল ভুক্তভোগী জনমানুষকে অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বর্তমান সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।

আরো পড়ুনঃসপ্তাহের ব্যবধানে পটিয়ায় ২১ গরু লুট, শঙ্কায় খামারিরা
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি আবু জামাল সাঈদ আহমেদ, খন্দকার আবদুর রব ও হাজী ওসমান গণি, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।