মুক্তির দাবিতে কারাগারে দুই খুবি শিক্ষার্থীর অনশন, অবস্থা সংকটাপন্ন
- সময় : ০৬:২৬:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
- / ২০ বার দেখেছে
মুক্তির দাবিতে ৮ দিন ধরে কারাগারে আমরণ অনশনরত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তাদের খুলনা জেলা কারাগার হাসপাতালে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।
দুটি মামলায় ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খুবির এই দুই ছাত্র হলেন, নূর মোহাম্মদ অনিক ওরফে নূর ও মো. মোজাহিদুল ইসলাম। ২০২০ সালে কথিত নব্য জেএমবির সদস্য হিসেবে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, মুক্তির দাবিতে গত ১০ নভেম্বর থেকে দুটি মামলায় ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খুবির দুই ছাত্র নূর মোহাম্মদ অনিক ওরফে নূর ও মো. মোজাহিদুল ইসলাম খুলনা জেলা কারাগারে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তাদের কারাগার হাসপাতালে রেখে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা কিছু খাচ্ছে না।
তিনি জানান, বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক ও কারাবিধি অনুযায়ী আদালতকে অবহিত করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আরো তিনটি মামলা রয়েছে।
আরো পড়ুনঃপাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া
এদিকে অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু। তিনি বলেন, দ্রুত ভালো চিকিৎসা না করালে তাদের বাঁচানো সম্ভব নাও হতে পারে। তবে, আইনজীবী হিসেবে তাদের আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি- কিন্তু তাদের সাফ কথা ‘হয় আমাদের মুক্তি দিতে হবে, নয় লাশ হয়ে কারাগার থেকে বের হবো’।
নূর মোহাম্মদ অনিক ওরফে নূর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও মো. মোজাহিদুল ইসলাম পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। অনিক মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার মোড়াবাড়ি গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আর মোজাহিদুল ইসলাম বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ঘাগুর দুয়ার গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে।
খুলনার জেল সুপার মো. নাসির উদ্দিন গত ১৪ নভেম্বর খুলনা মহানগর দায়রা জজ বরাবর পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেন, ওই দুই শিক্ষার্থীকে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর আদালতের মাধ্যমে খুলনা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার বিস্ফোরক মামলায় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০২২ সালের ২২ মে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এছাড়া সোনাডাঙ্গা থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১০ বছর সাজা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর গত ২২ সেপ্টেম্বর এই দুই বন্দি কর্তৃপক্ষকে জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এরপর ১৭ দিন বগুড়া ডিবি হেফাজতে নিয়ে গুম করে নির্যাতনের পর তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকা-ের কট্টর সমালোচনা করে জনমত গড়ে তোলার কারণে তারা প্রহসনের মামলার শিকার হয়েছেন।
বিগত ছাত্র- জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও তারা কারাগারে এখনো আটক থাকায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং সাজাভোগ করছেন। তাদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কারাগার থেকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা না করায় কারাগারে গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রথমবার অনশনের হুমকি দিয়ে সরকারি খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। ঐ সময়ে তাদের আগ্রহ অনুযায়ী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করিয়ে তাদের স্বাভাবিক করানো হয়। কিন্তু কারাগার থেকে এখনো মুক্তি না পাওয়ায় তারা একই দাবি তুলে গত ১০ নভেম্বর হতে পুনরায় অনশন শুরু করেন।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কারাগারে অনশনরত খুবির দুই ছাত্রের ব্যাপারে আমাকে জানানো হয়েছে। কারাবিধি (জেল কোড) অনুযায়ী তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো পড়ুনঃবাইডেনের ‘বিস্ফোরক সিদ্ধান্তের’ প্রতিক্রিয়া জানালো রাশিয়া
দুই শিক্ষার্থীর স্বজনদের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি আটক করার ১৭ দিন পরে ২৫ জানুয়ারি তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তৎকালীন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির গণমাধ্যমে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করেন। সে সময় পুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওই দু’জন নব্য জেএমবির সদস্য। তাদের কাছ থেকে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানা কৃষক লীগ কার্যালয় ও আড়ংঘাটা থানার সামনে বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে ঐ দুজন জড়িত ছিলেন। বোমা তৈরির উপকরণ তারা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতেন। তারা নব্য জেএমবি সদস্য।