০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যাম্পাস খুললে কী হবে, কীভাবে হবে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমন

রিপোর্টার
  • সময় : ০৭:৫১:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১২ বার দেখেছে

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি করেছেন। বলেছেন, শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরিয়ে নিয়ে হলগুলো খুলে দিলেই কি শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হবে?

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতারা যেভাবে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, তাঁরা কি এর প্রতিশোধ নিতে চাইবেন না? কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেভাবে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরাও কি এর জবাবে চুপ করে থাকবেন?

সরকার সম্ভবত বুঝতে পারছে যে এভাবে ক্যাম্পাস খুলে দিলে পরিস্থিতি আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

কিন্তু আসলেই কি সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে? শুরু থেকেই সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়েছে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোনো ছাড় দিতে তারা প্রস্তুত নয়। পুরো দায়িত্ব আদালতের কাঁধে চাপিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারের কোনো প্রতিনিধি আলোচনায়ও বসতে চাননি। এখনো তাঁরা নিজেদের জেদ ও শক্তি ধরে রেখেছেন।

অথচ আপিল বিভাগের রায়ের আগে, এমনকি পরেও শিক্ষার্থীদের আস্থায় নেওয়ার সুযোগ ছিল। সেনাবাহিনী নামানো ও কারফিউ জারির পাশাপাশি সহনশীল ভূমিকার দরকার ছিল। দরকার ছিল সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক আচরণ করার।

গত সপ্তাহে আমরা দেখলাম, ইন্টারনেট বন্ধ রেখে সরকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিজেদের মতো সংবাদ ও অভিমত প্রচার করে চলেছে। ১৯ জুলাই দেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। অথচ কী বিস্ময়কর, ওই দিন কোনো টেলিভিশন চ্যানেল মৃতের সংখ্যা প্রচার করেনি। এমনকি তার পর থেকে আন্দোলনের খবরও ঠিকমতো প্রচারিত হয়নি।

নিহতের সংখ্যা জানতে মানুষকে পরদিন সকালে পত্রিকা হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করতে হয়েছে। অভিযোগ আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও ঠিকমতো তথ্য দেওয়া হয়নি। ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হওয়া কিংবা নতুন করে সংযোগ পাওয়ার পর তাই স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বাসযোগ্য দৈনিকগুলোর চাহিদা বেড়ে গেছে।

সীমিতভাবে ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর অবাক হয়ে দেখতে হচ্ছে, বিভিন্ন অনলাইন ও ডিজিটাল মাধ্যম থেকে আন্দোলন-সহিংসতার অসংখ্য ভিডিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবার টেলিভিশনের সংবাদ প্রতিবেদনগুলোতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার বিপরীতে পুলিশের সরাসরি গুলিবর্ষণ ও রাবার বুলেট ছোড়ার ঘটনাগুলোর কথা সেভাবে উচ্চারিত হচ্ছে না।

সরকারের প্রচারে প্রাধান্য পাচ্ছে বিরোধী পক্ষ নাশকতা করে কীভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে সেগুলো। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে সরকার নিশ্চয় দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু শুরু থেকেই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, তারা একপক্ষীয় অবস্থান নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাউকে কাউকে তুলে নেওয়া, নিপীড়ন কিংবা হুমকির বিপরীতে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেই।

শক্তি প্রদর্শন ও একপক্ষীয় অবস্থানের আরেক নমুনা মিলছে ‘চিরুনি’ অভিযানে। বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে গুলিবিদ্ধ ও আহত মানুষের খোঁজ করা হচ্ছে। অথচ এই আন্দোলনে এত জনসম্পৃক্ততা কেন তৈরি হলো তার কোনো বিশ্লেষণ সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে না।

আজকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সরকার সেই আন্দোলনকে দমিয়েছিল ‘হেলমেট’ বাহিনী আর পুলিশ দিয়ে। এখন ওই সব শিক্ষার্থীর অনেকেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে আগের ক্ষোভ পুরোপুরি প্রশমিত হওয়ার কারণ দেখি না। এবারও মনে হয়েছে, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় একই কায়দায় প্রথমে পেটোয়া বাহিনী দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমানোর চেষ্টা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠে।

বাংলাদেশের কোনো আন্দোলনে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এত ঘটতও না, যদি সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা মানুষের মুখের ভাষা পড়তে পারতেন। শুধু একপেশে বয়ানে পরিস্থিতির বাস্তব উত্তরণ ঘটানো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁরা ভোটের ব্যাপারে এত আগ্রহী নন, যত আগ্রহী একটি চাকরির জন্য।

দুর্নীতি আর অনিয়মে ভরে ওঠা রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার জন্য শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত করেন শাসক দল ও রাজনীতিবিদদের। সাম্প্রতিক কালে তাঁদের অভিযোগের তালিকায় যোগ হয়েছেন সরকারের কিছু আমলা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তি। ভেবে দেখুন, শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্দোলনে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন চেয়েছেন। কিন্তু কোনো সরকারি-বেসরকারি নিয়োগে যথার্থ মেধার মূল্যায়ন হয় কি না।

অনেকের মনে করছেন, আন্দোলন থামাতে সরকার তড়িঘড়ি করে আদালতের মাধ্যমে রায়ের ব্যবস্থা করেছে। এর জবাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা বলছেন, আদালত যেভাবে রায় দিয়েছেন, তাতে সরকার যেকোনো সময়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে এই রায় বদলাতে পারে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধারা সমাজের অনগ্রসর গোষ্ঠী নন। অনেকেই আবার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বর্তমান কোটা ভাগে পিছিয়ে থাকা নারীর অংশ না থাকায়।

আদালত যথার্থই বলেছেন, নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজনমতো কোটার হার কমবেশি করতে পারবে। কিন্তু সরকার সত্যিকার অর্থে কোটার যৌক্তিক ভাগ করতে চাইলে সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারত।

বর্তমান অবস্থায় পরিস্থিতির সত্যিকার উন্নতি করতে হলে সরকারকে সহনশীল আচরণ করতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে সেই আশা ব্যক্ত করা হয়েছে। অথচ আমরা এখনো সরকারের একপেশে ও অগণতান্ত্রিক আচরণ দেখছি।

২৩ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলীয় সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পরে গণমাধ্যমের সামনে নজিরবিহীনভাবে তিনি বা তাঁর দলের কেউ কোনো কথা বলেননি। তাহলে কি সরকারবিরোধী অভ্যুত্থানকে অনিবার্য করে তুলতে চান তাঁরা?

বাংলাদেশের কোনো আন্দোলনে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এত ঘটতও না, যদি সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা মানুষের মুখের ভাষা পড়তে পারতেন। শুধু একপেশে বয়ানে পরিস্থিতির বাস্তব উত্তরণ ঘটানো সম্ভব নয়।

শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সারা দেশের মানুষের মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে এবং যে ক্ষত আক্ষরিক অর্থেই হাজার হাজার মানুষের শরীরে তৈরি হয়েছে, তা জিইয়ে রেখে কীভাবে গণতন্ত্র এগিয়ে চলবে?

ট্যাগ :

শেয়ার করুন

ক্যাম্পাস খুললে কী হবে, কীভাবে হবে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমন

সময় : ০৭:৫১:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি করেছেন। বলেছেন, শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরিয়ে নিয়ে হলগুলো খুলে দিলেই কি শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হবে?

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতারা যেভাবে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, তাঁরা কি এর প্রতিশোধ নিতে চাইবেন না? কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেভাবে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরাও কি এর জবাবে চুপ করে থাকবেন?

সরকার সম্ভবত বুঝতে পারছে যে এভাবে ক্যাম্পাস খুলে দিলে পরিস্থিতি আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

কিন্তু আসলেই কি সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে? শুরু থেকেই সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়েছে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোনো ছাড় দিতে তারা প্রস্তুত নয়। পুরো দায়িত্ব আদালতের কাঁধে চাপিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারের কোনো প্রতিনিধি আলোচনায়ও বসতে চাননি। এখনো তাঁরা নিজেদের জেদ ও শক্তি ধরে রেখেছেন।

অথচ আপিল বিভাগের রায়ের আগে, এমনকি পরেও শিক্ষার্থীদের আস্থায় নেওয়ার সুযোগ ছিল। সেনাবাহিনী নামানো ও কারফিউ জারির পাশাপাশি সহনশীল ভূমিকার দরকার ছিল। দরকার ছিল সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক আচরণ করার।

গত সপ্তাহে আমরা দেখলাম, ইন্টারনেট বন্ধ রেখে সরকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিজেদের মতো সংবাদ ও অভিমত প্রচার করে চলেছে। ১৯ জুলাই দেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। অথচ কী বিস্ময়কর, ওই দিন কোনো টেলিভিশন চ্যানেল মৃতের সংখ্যা প্রচার করেনি। এমনকি তার পর থেকে আন্দোলনের খবরও ঠিকমতো প্রচারিত হয়নি।

নিহতের সংখ্যা জানতে মানুষকে পরদিন সকালে পত্রিকা হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করতে হয়েছে। অভিযোগ আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও ঠিকমতো তথ্য দেওয়া হয়নি। ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হওয়া কিংবা নতুন করে সংযোগ পাওয়ার পর তাই স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বাসযোগ্য দৈনিকগুলোর চাহিদা বেড়ে গেছে।

সীমিতভাবে ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর অবাক হয়ে দেখতে হচ্ছে, বিভিন্ন অনলাইন ও ডিজিটাল মাধ্যম থেকে আন্দোলন-সহিংসতার অসংখ্য ভিডিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবার টেলিভিশনের সংবাদ প্রতিবেদনগুলোতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার বিপরীতে পুলিশের সরাসরি গুলিবর্ষণ ও রাবার বুলেট ছোড়ার ঘটনাগুলোর কথা সেভাবে উচ্চারিত হচ্ছে না।

সরকারের প্রচারে প্রাধান্য পাচ্ছে বিরোধী পক্ষ নাশকতা করে কীভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে সেগুলো। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে সরকার নিশ্চয় দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু শুরু থেকেই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, তারা একপক্ষীয় অবস্থান নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাউকে কাউকে তুলে নেওয়া, নিপীড়ন কিংবা হুমকির বিপরীতে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেই।

শক্তি প্রদর্শন ও একপক্ষীয় অবস্থানের আরেক নমুনা মিলছে ‘চিরুনি’ অভিযানে। বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে গুলিবিদ্ধ ও আহত মানুষের খোঁজ করা হচ্ছে। অথচ এই আন্দোলনে এত জনসম্পৃক্ততা কেন তৈরি হলো তার কোনো বিশ্লেষণ সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে না।

আজকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সরকার সেই আন্দোলনকে দমিয়েছিল ‘হেলমেট’ বাহিনী আর পুলিশ দিয়ে। এখন ওই সব শিক্ষার্থীর অনেকেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে আগের ক্ষোভ পুরোপুরি প্রশমিত হওয়ার কারণ দেখি না। এবারও মনে হয়েছে, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় একই কায়দায় প্রথমে পেটোয়া বাহিনী দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমানোর চেষ্টা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠে।

বাংলাদেশের কোনো আন্দোলনে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এত ঘটতও না, যদি সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা মানুষের মুখের ভাষা পড়তে পারতেন। শুধু একপেশে বয়ানে পরিস্থিতির বাস্তব উত্তরণ ঘটানো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁরা ভোটের ব্যাপারে এত আগ্রহী নন, যত আগ্রহী একটি চাকরির জন্য।

দুর্নীতি আর অনিয়মে ভরে ওঠা রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার জন্য শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত করেন শাসক দল ও রাজনীতিবিদদের। সাম্প্রতিক কালে তাঁদের অভিযোগের তালিকায় যোগ হয়েছেন সরকারের কিছু আমলা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তি। ভেবে দেখুন, শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্দোলনে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন চেয়েছেন। কিন্তু কোনো সরকারি-বেসরকারি নিয়োগে যথার্থ মেধার মূল্যায়ন হয় কি না।

অনেকের মনে করছেন, আন্দোলন থামাতে সরকার তড়িঘড়ি করে আদালতের মাধ্যমে রায়ের ব্যবস্থা করেছে। এর জবাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা বলছেন, আদালত যেভাবে রায় দিয়েছেন, তাতে সরকার যেকোনো সময়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে এই রায় বদলাতে পারে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধারা সমাজের অনগ্রসর গোষ্ঠী নন। অনেকেই আবার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বর্তমান কোটা ভাগে পিছিয়ে থাকা নারীর অংশ না থাকায়।

আদালত যথার্থই বলেছেন, নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজনমতো কোটার হার কমবেশি করতে পারবে। কিন্তু সরকার সত্যিকার অর্থে কোটার যৌক্তিক ভাগ করতে চাইলে সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারত।

বর্তমান অবস্থায় পরিস্থিতির সত্যিকার উন্নতি করতে হলে সরকারকে সহনশীল আচরণ করতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে সেই আশা ব্যক্ত করা হয়েছে। অথচ আমরা এখনো সরকারের একপেশে ও অগণতান্ত্রিক আচরণ দেখছি।

২৩ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলীয় সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পরে গণমাধ্যমের সামনে নজিরবিহীনভাবে তিনি বা তাঁর দলের কেউ কোনো কথা বলেননি। তাহলে কি সরকারবিরোধী অভ্যুত্থানকে অনিবার্য করে তুলতে চান তাঁরা?

বাংলাদেশের কোনো আন্দোলনে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এত ঘটতও না, যদি সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা মানুষের মুখের ভাষা পড়তে পারতেন। শুধু একপেশে বয়ানে পরিস্থিতির বাস্তব উত্তরণ ঘটানো সম্ভব নয়।

শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সারা দেশের মানুষের মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে এবং যে ক্ষত আক্ষরিক অর্থেই হাজার হাজার মানুষের শরীরে তৈরি হয়েছে, তা জিইয়ে রেখে কীভাবে গণতন্ত্র এগিয়ে চলবে?