অস্থির এ সময়ে ভীষণ উৎকণ্ঠায় আছেন ভিনদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশে ভাই-বোন-বন্ধুদের পাশে দাঁড়াতে না পারলেও নিজেদের মতো করে ক্যাম্পাসে এক হয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেলডোনিয়ান থিয়েটারের সামনে। সেখানে বিভিন্ন বিভাগের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যোগ দিয়েছিলেন ভিনদেশিরাও।
সমাবেশে অংশ নেওয়া পিএইচডি গবেষক মধুরিমা সেন বলেন, ‘আমরা সবাই-ই আসলে মানসিকভাবে খুব অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দিন-রাত দেশের খোঁজ নিচ্ছি।’ সমাবেশে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী তনিমা ইসলামের বক্তব্য, ‘র্যালিতে কথা বলার সময় আমার হাত কাঁপছিল। আমার কষ্ট কোনোভাবেই ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলাম না। দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের বর্বরতা দেখে আমি স্বাভাবিক থাকতে পারছি না। আমরা অক্সফোর্ডের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পাশে আছি।’
প্রার্থনায় বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন বাংলাদেশের বহু শিক্ষার্থী। দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে যাওয়া সহিংসতা, নির্যাতন ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনায় নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বিবৃতি ও বক্তব্য দিয়েছেন তাঁদের একাংশ।
অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অতনু চক্রবর্তী বলেন, ‘সমর্থন জানিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রান্তে জমা হয়েছিলাম। বিভিন্ন বিভাগের ১০০ জনের মতো শিক্ষার্থী ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। আমাদের বিদেশি সহপাঠীরাও আমাদের কথা শুনে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানায়। অনেক শিক্ষার্থী দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে সমস্যায় পড়ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার জন্য কাজ করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে আমাদের দাবি তুলে ধরছি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাসহ আমরা এক হয়ে আলাবামার সিনেটরের মনোযোগ আকর্ষণ করছি। বাংলাদেশকে আমরা আমাদের প্রার্থনায় রাখছি।’
প্রতিবাদের অনন্য ভাষা
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশের সাম্প্রতিক ইস্যুতে সোচ্চার ভূমিকা রাখছেন। জাপান, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা জাতীয় পতাকাসহ নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন বলে খোঁজ পাওয়া গেছে। কানাডার লাভাল ইউনিভার্সিটি থেকে নাইমা সুলতানা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দেশের শিক্ষার্থীদের সংগ্রাম ও আর্তনাদ আমরা হাজার মাইল দূর থেকেও শুনতে পাচ্ছি। দূরে থাকলেও আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবার সঙ্গে আছি।’
অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অনুপম দাশ বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসা আক্রমণের খবর অনলাইনে পড়েছি। মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, তখন খুব শঙ্কায় কেটেছে। এখন যেসব সংবাদ পড়ছি, শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ও আক্রমণের কথা শুনে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। আমরা এখানকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এক হয়ে এ ঘটনার নিন্দা জানাই। শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানাই।’ যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমেরিকায় বসে দেশের এ রকম কষ্টদায়ক চিত্র দেখতে হবে, কখনো ভাবিনি। বায়ান্ন বা উনসত্তরের আন্দোলনের চেয়েও এ আন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা বেশি। যেকোনো স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই এর প্রতিবাদ করবে। আমরাও আর সবার সঙ্গে সকল হত্যার বিচার ও হত্যার নির্দেশদাতা সবার সাজা চাই।’