১০:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালমনিরহাটে ‘সুপারফুড’ কিনোয়া আবাদে সাফল্য, বাজার নিয়ে চ্যালেঞ্জ

রিপোর্টার
  • সময় : ০৬:২১:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৯ বার দেখেছে

বেলে ও দোআঁশ মাটির কারণে লালমনিরহাটে ‘সুপারফুড’ খ্যাত বিদেশি ফসল কিনোয়া চাষে সাফল্য পাচ্ছেন চাষিরা। কিন্তু উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারটির বাজার নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। চলতি বছর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ৭০ শতাংশ জমিতে এই ফসল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন এক কৃষক। ফসলটির বাজারব্যবস্থা তৈরি করতে পারলে আরও অনেকে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কিনোয়া মূলত দক্ষিণ আমেরিকার ফসল। একমাত্র উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎস, যাতে ৯ ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড আছে। বিশেষত লাইসিন নামের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড আর কোনো উদ্ভিজ্জ আমিষ খাদ্য থেকে সেভাবে পাওয়া যায় না। আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই ও ফাইবারের চমৎকার উৎস এই কিনোয়া।

কিনোয়া মূলত দক্ষিণ আমেরিকার ফসল। একমাত্র উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎস, যাতে ৯ ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড আছে
কিনোয়া মূলত দক্ষিণ আমেরিকার ফসল। একমাত্র উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎস, যাতে ৯ ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড আছেছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটে এখন পর্যন্ত তিনজন কৃষক কিনোয়া চাষ করেছেন। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ১৩ শতক জমিতে কিনোয়া আবাদ করেন সদর উপজেলার মহেন্দ্র নগরের চিনিপাড়া গ্রামের ইসরাইল হোসেন। এরপর ২০২৩ সালে ৫০ শতক জমিতে আবাদ করেন একই উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের মুকুল মিয়া। সর্বশেষ চলতি বছর হাতীবান্ধার বড়খাতা গ্রামের রেজাউল করিম ৭০ শতক জমিতে কিনোয়া আবাদ করেন। সেখান থেকে আট মণ ফসল পেয়েছেন তিনি।

রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চগড়ের এক কৃষকের কাছ থেকে তিনি কিনোয়া চাষের ব্যাপারে জানতে পারেন। তাঁর কাছ থেকে বীজ এনে প্রথমবারের মতো ৭০ শতাংশ জমিতে চাষ করেন। এতে তাঁর ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মোট ৩২০ কেজি ফলন পেয়েছেন। উৎপাদিত ফসল কোথায় বিক্রি করবেন, সেটি নিয়ে চিন্তিত। স্থানীয় কিছু লোক কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইতিমধ্যে ৬০০ টাকা কেজি দরে কয়েক কেজি বিক্রিও করেছেন। তিনি বলেন, ফসল বিক্রি করতে না পারলেও প্রয়োজনে নিজেরা খাবেন। কিনোয়ার বাজার সুবিধা পেলে অন্য কৃষকেরা এটি চাষে আগ্রহী হবেন তিনি মনে করেন।

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি শতাংশ জমিতে কিনোয়া চাষ করতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এর বেশ চাহিদা আছে। বাংলাদেশে আমদানি করা কিনোয়া প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তাঁরা শহরের বড় বাজারগুলোতে কিনোয়া বিক্রির বাজার তৈরির চেষ্টা করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর গবেষণার পর ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কিনোয়া চাষ করা হয়। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবার মোট ২৫ জন কৃষক আট একর জমিতে এই ফসল চাষ করেন। শীত মৌসুমে শর্ষের আবাদের সময় এটির চাষ শুরু হয়। তিন মাসের আগে-পরে ফসল কাটার উপযোগী হয়। শর্ষের মতো একই পদ্ধতিতে ফসল কাটা ও মাড়াই করা যায়। কিনোয়ার গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, লালমনিরহাটের মাটি কিনোয়া ফসল চাষের জন্য উপযুক্ত। এবার এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গড়ে সাড়ে পাঁচ মণ ফসল পাওয়া গেছে। কৃষকদের ফসল বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারলে বা বাজারের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হলে এটির আবাদ বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে।

ট্যাগ :

শেয়ার করুন

লালমনিরহাটে ‘সুপারফুড’ কিনোয়া আবাদে সাফল্য, বাজার নিয়ে চ্যালেঞ্জ

সময় : ০৬:২১:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

বেলে ও দোআঁশ মাটির কারণে লালমনিরহাটে ‘সুপারফুড’ খ্যাত বিদেশি ফসল কিনোয়া চাষে সাফল্য পাচ্ছেন চাষিরা। কিন্তু উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারটির বাজার নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। চলতি বছর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ৭০ শতাংশ জমিতে এই ফসল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন এক কৃষক। ফসলটির বাজারব্যবস্থা তৈরি করতে পারলে আরও অনেকে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কিনোয়া মূলত দক্ষিণ আমেরিকার ফসল। একমাত্র উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎস, যাতে ৯ ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড আছে। বিশেষত লাইসিন নামের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড আর কোনো উদ্ভিজ্জ আমিষ খাদ্য থেকে সেভাবে পাওয়া যায় না। আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই ও ফাইবারের চমৎকার উৎস এই কিনোয়া।

কিনোয়া মূলত দক্ষিণ আমেরিকার ফসল। একমাত্র উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎস, যাতে ৯ ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড আছে
কিনোয়া মূলত দক্ষিণ আমেরিকার ফসল। একমাত্র উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎস, যাতে ৯ ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড আছেছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটে এখন পর্যন্ত তিনজন কৃষক কিনোয়া চাষ করেছেন। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ১৩ শতক জমিতে কিনোয়া আবাদ করেন সদর উপজেলার মহেন্দ্র নগরের চিনিপাড়া গ্রামের ইসরাইল হোসেন। এরপর ২০২৩ সালে ৫০ শতক জমিতে আবাদ করেন একই উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের মুকুল মিয়া। সর্বশেষ চলতি বছর হাতীবান্ধার বড়খাতা গ্রামের রেজাউল করিম ৭০ শতক জমিতে কিনোয়া আবাদ করেন। সেখান থেকে আট মণ ফসল পেয়েছেন তিনি।

রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চগড়ের এক কৃষকের কাছ থেকে তিনি কিনোয়া চাষের ব্যাপারে জানতে পারেন। তাঁর কাছ থেকে বীজ এনে প্রথমবারের মতো ৭০ শতাংশ জমিতে চাষ করেন। এতে তাঁর ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মোট ৩২০ কেজি ফলন পেয়েছেন। উৎপাদিত ফসল কোথায় বিক্রি করবেন, সেটি নিয়ে চিন্তিত। স্থানীয় কিছু লোক কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইতিমধ্যে ৬০০ টাকা কেজি দরে কয়েক কেজি বিক্রিও করেছেন। তিনি বলেন, ফসল বিক্রি করতে না পারলেও প্রয়োজনে নিজেরা খাবেন। কিনোয়ার বাজার সুবিধা পেলে অন্য কৃষকেরা এটি চাষে আগ্রহী হবেন তিনি মনে করেন।

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি শতাংশ জমিতে কিনোয়া চাষ করতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এর বেশ চাহিদা আছে। বাংলাদেশে আমদানি করা কিনোয়া প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তাঁরা শহরের বড় বাজারগুলোতে কিনোয়া বিক্রির বাজার তৈরির চেষ্টা করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর গবেষণার পর ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কিনোয়া চাষ করা হয়। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবার মোট ২৫ জন কৃষক আট একর জমিতে এই ফসল চাষ করেন। শীত মৌসুমে শর্ষের আবাদের সময় এটির চাষ শুরু হয়। তিন মাসের আগে-পরে ফসল কাটার উপযোগী হয়। শর্ষের মতো একই পদ্ধতিতে ফসল কাটা ও মাড়াই করা যায়। কিনোয়ার গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, লালমনিরহাটের মাটি কিনোয়া ফসল চাষের জন্য উপযুক্ত। এবার এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গড়ে সাড়ে পাঁচ মণ ফসল পাওয়া গেছে। কৃষকদের ফসল বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারলে বা বাজারের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হলে এটির আবাদ বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে।