০২:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোয়ালন্দে ‘শ্রমের হাটে’ এসেও কাজ পাচ্ছেন না, বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ

রিপোর্টার
  • সময় : ০৬:২০:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৩ বার দেখেছে

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ রেলস্টেশন এলাকার ফাঁকা জায়গায় শতাধিক মানুষের ভিড়। কয়েকজন জটলা করে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকে গল্পগুজব করছেন। তাঁদের কাছে একটি করে ছোট ব্যাগ। এতে কাপড় ও মাঠে কাজ করার যন্ত্র। তাঁরা কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকেন।

কাজের খোঁজে এসেছেন এই শ্রমজীবী মানুষেরা। রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর প্রভৃতি জেলা বাড়ি তাঁদের।

গতকাল বুধবার বিকেলে ওই ‘শ্রমের হাটে’ কথা হয় সাত থেকে আটজনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, জন (শ্রম) বিক্রি করে চলে তাঁদের সংসার। এলাকায় কাজ নেই। কাজের সন্ধানে এসেছেন এই অঞ্চলে। কেউ একা, আবার কেউ কয়েকজন একত্রে এসেছেন। বর্ষাকালে অধিকাংশ খেতখামার তলিয়ে যাওয়ায় কাজ কমে গেছে। আয়-উপার্জন না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। এর মধ্যে সারা দেশে শুরু হয়েছে আন্দোলন-কারফিউ। এ কারণে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তাঁরা।

মেহেরপুর থেকে দুই সপ্তাহ আগে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হন জমির উদ্দিন (৫০)। স্ত্রী, সন্তানসহ তাঁর সাত সদস্যের সংসার। আয়রোজগার না হলে অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তাই কাপড়ের ব্যাগ ও একটি কাস্তে নিয়ে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন জমির উদ্দিন। রাজবাড়ী স্টেশনে দুই দিন বসে থাকার পর এক গৃহস্থের বাড়িতে কাজ পান। চার দিন কাজ করার পর শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। কারফিউ বলবৎ হওয়ায় বাইরে যেতে পারেননি। রাজবাড়ী রেলস্টেশন এলাকাতেই ছিলেন। কারফিউ শিথিল হওয়ায় দুই দিন আগে এসেছেন গোয়ালন্দে। এখনো কাজের ব্যবস্থা হয়নি। যা রোজগার করেছিলেন, তা-ও প্রায় ফুরিয়ে যাওয়ার পথে।

প্রায় একই কথা বলেন পাবনার সাঁথিয়া থেকে আসা ইসলাম প্রামাণিক (৬০)। তিনি বলেন, বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। কারফিউর কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। ট্রলারে করে নদী পাড়ি দিয়ে চার দিন আগে আসেন গোয়ালন্দে। পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ছিলেন। বন্যার পানিতে খেতখামার তলিয়ে যাওয়ায় এখনো কোনো কাজ পাননি। এখন পাট কাটা বা ধোয়ার জন্য শ্রমিক লাগবে। তাই তিনি কাজে অপেক্ষায় আছেন।

এখন আর কুলায় উঠতে পারছি না। সারা দিন চলে যাচ্ছে, এখনো কোনো গৃহস্থ কাজের কথা বলেনি। তিন বেলা খাওনের সঙ্গে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দিলেই কাজে যাব।

সাবান মোল্লা, কৃষি শ্রমিক

মানিকগঞ্জের তেঁওতা থেকে এসেছেন কৃষিশ্রমিক সাবান মোল্লা (৬৫)। স্ত্রী, ছেলে, নাতিসহ তাঁর আট সদস্যের সংসার। গতকাল সকালে ট্রলারে নদী পাড়ি দিয়ে এখানে কাজের সন্ধানে এসেছেন। সাবান মোল্লা বলেন, ‘এখন আর কুলায় উঠতে পারছি না। সারা দিন চলে যাচ্ছে, এখনো কোনো গৃহস্থ কাজের কথা বলেনি। তিন বেলা খাওনের সঙ্গে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দিলেই কাজে যাব। এই আশায় বসে আছি।’

সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থান করে ইউনুস সরদার নামের এক গৃহস্থের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেন, খেতের পাট কাটতে হবে। এ জন্য দুজন মজুর লাগবে। জনপ্রতি দিনে ৫০০–৬০০ টাকায় দুজনকে নেবেন।

আরও কয়েকজন কৃষিশ্রমিক জানান, এক দিনের কাজে তাঁরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে পান। বর্তমানে জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে এই টাকায় সংসার চালানো অনেক কষ্টকর। দুই দিন কাজ করলে তিন দিন বেকার বসে থাকতে হয়। বর্ষাকালে অধিকাংশ খেতখামার তলিয়ে গেছে। কাজও অনেক কমে গেছে।

ট্যাগ :

শেয়ার করুন

গোয়ালন্দে ‘শ্রমের হাটে’ এসেও কাজ পাচ্ছেন না, বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ

সময় : ০৬:২০:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ রেলস্টেশন এলাকার ফাঁকা জায়গায় শতাধিক মানুষের ভিড়। কয়েকজন জটলা করে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকে গল্পগুজব করছেন। তাঁদের কাছে একটি করে ছোট ব্যাগ। এতে কাপড় ও মাঠে কাজ করার যন্ত্র। তাঁরা কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকেন।

কাজের খোঁজে এসেছেন এই শ্রমজীবী মানুষেরা। রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর প্রভৃতি জেলা বাড়ি তাঁদের।

গতকাল বুধবার বিকেলে ওই ‘শ্রমের হাটে’ কথা হয় সাত থেকে আটজনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, জন (শ্রম) বিক্রি করে চলে তাঁদের সংসার। এলাকায় কাজ নেই। কাজের সন্ধানে এসেছেন এই অঞ্চলে। কেউ একা, আবার কেউ কয়েকজন একত্রে এসেছেন। বর্ষাকালে অধিকাংশ খেতখামার তলিয়ে যাওয়ায় কাজ কমে গেছে। আয়-উপার্জন না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। এর মধ্যে সারা দেশে শুরু হয়েছে আন্দোলন-কারফিউ। এ কারণে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তাঁরা।

মেহেরপুর থেকে দুই সপ্তাহ আগে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হন জমির উদ্দিন (৫০)। স্ত্রী, সন্তানসহ তাঁর সাত সদস্যের সংসার। আয়রোজগার না হলে অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তাই কাপড়ের ব্যাগ ও একটি কাস্তে নিয়ে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন জমির উদ্দিন। রাজবাড়ী স্টেশনে দুই দিন বসে থাকার পর এক গৃহস্থের বাড়িতে কাজ পান। চার দিন কাজ করার পর শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। কারফিউ বলবৎ হওয়ায় বাইরে যেতে পারেননি। রাজবাড়ী রেলস্টেশন এলাকাতেই ছিলেন। কারফিউ শিথিল হওয়ায় দুই দিন আগে এসেছেন গোয়ালন্দে। এখনো কাজের ব্যবস্থা হয়নি। যা রোজগার করেছিলেন, তা-ও প্রায় ফুরিয়ে যাওয়ার পথে।

প্রায় একই কথা বলেন পাবনার সাঁথিয়া থেকে আসা ইসলাম প্রামাণিক (৬০)। তিনি বলেন, বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। কারফিউর কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। ট্রলারে করে নদী পাড়ি দিয়ে চার দিন আগে আসেন গোয়ালন্দে। পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ছিলেন। বন্যার পানিতে খেতখামার তলিয়ে যাওয়ায় এখনো কোনো কাজ পাননি। এখন পাট কাটা বা ধোয়ার জন্য শ্রমিক লাগবে। তাই তিনি কাজে অপেক্ষায় আছেন।

এখন আর কুলায় উঠতে পারছি না। সারা দিন চলে যাচ্ছে, এখনো কোনো গৃহস্থ কাজের কথা বলেনি। তিন বেলা খাওনের সঙ্গে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দিলেই কাজে যাব।

সাবান মোল্লা, কৃষি শ্রমিক

মানিকগঞ্জের তেঁওতা থেকে এসেছেন কৃষিশ্রমিক সাবান মোল্লা (৬৫)। স্ত্রী, ছেলে, নাতিসহ তাঁর আট সদস্যের সংসার। গতকাল সকালে ট্রলারে নদী পাড়ি দিয়ে এখানে কাজের সন্ধানে এসেছেন। সাবান মোল্লা বলেন, ‘এখন আর কুলায় উঠতে পারছি না। সারা দিন চলে যাচ্ছে, এখনো কোনো গৃহস্থ কাজের কথা বলেনি। তিন বেলা খাওনের সঙ্গে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দিলেই কাজে যাব। এই আশায় বসে আছি।’

সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থান করে ইউনুস সরদার নামের এক গৃহস্থের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেন, খেতের পাট কাটতে হবে। এ জন্য দুজন মজুর লাগবে। জনপ্রতি দিনে ৫০০–৬০০ টাকায় দুজনকে নেবেন।

আরও কয়েকজন কৃষিশ্রমিক জানান, এক দিনের কাজে তাঁরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে পান। বর্তমানে জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে এই টাকায় সংসার চালানো অনেক কষ্টকর। দুই দিন কাজ করলে তিন দিন বেকার বসে থাকতে হয়। বর্ষাকালে অধিকাংশ খেতখামার তলিয়ে গেছে। কাজও অনেক কমে গেছে।