০২:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেড ফায়ার অ্যান্ট: সিসিলির আতঙ্ক হয়ে উঠছে যে পিঁপড়া

রিপোর্টার
  • সময় : ০৬:১৯:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৫ বার দেখেছে

বিশ্বায়নের এই যুগে শুধু পণ্যই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে না। উদ্ভিদ ও প্রাণীও অযাচিতভাবে ভিনদেশে উদয় হচ্ছে। ইতালির সিসিলি দ্বীপে এক মারাত্মক পিঁপড়ার আবির্ভাব দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

মাত্র কয়েক মিলিমিটার হলেও অন্যতম আক্রমণাত্মক প্রজাতির পোকা হিসেবে রেড ফায়ার অ্যান্ট পরিচিত। কৃষিবিজ্ঞানী ফার্দিনান্দো কালদারেলা সিসিলির সাইরাকিউজ অঞ্চলে সেই পোকা পর্যবেক্ষণ করছেন৷ তিনি পিঁপড়ার বাসা দেখিয়ে বলেন, ‘এর অর্থ এই জমির ওপর পিঁপড়া ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলো গাছের নিচের শিকড় খেয়ে নেয় এবং চাষের জন্য উপকারী পোকামাকড়ের ওপরেও হামলা চালায়।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে এই পিঁপড়া আক্রমণাত্মক প্রজাতির লাল তালিকার শীর্ষে রয়েছে। ইউরোপের মাটিতে এমন পোকা থাকতে পারে না বলে ধারণা করা হলেও গত বছরের হেমন্তকালে বিজ্ঞানীরা তার সন্ধান পেয়ে চমকে উঠেছিলেন। সাইরাকিউজ অঞ্চলে সেই পিঁপড়া প্রথম চোখে পড়েছিল।

এর এক বছর আগেই ফার্দিনান্দো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সময় কেউ তাঁর কথায় কান দেয়নি৷ ফার্দিনান্দো বলেন, ‘এই পিঁপড়া বেশ বড়। এই প্রজাতির সম্প্রসারণ প্রতিরোধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল৷ এভাবে রেড ফায়ার অ্যান্ট নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত৷ কারণ ব্রাজিল, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেও এই পিঁপড়ার প্রসার প্রতিরোধ করতে পারেনি৷ ফলে কৃষি ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।’

এই প্রজাতির আদি নিবাস ব্রাজিল। এটি কীভাবে এবং কবে সিসিলিতে পৌঁছাল, তা এখনো জানা যায়নি৷ ফার্দিনান্দো মনে করিয়ে দেন, এখনো পর্যন্ত এই হামলা নিয়ে হইচই হচ্ছে না৷ তেমন বড় ক্ষতিও হয়নি৷ কিন্তু পিঁপড়ার বাসার সংখ্যা মারাত্মক হারে বেড়ে গেলে শস্য, ফল ও শাকসবজি চাষের বিশাল ক্ষতি হবে।

যেসব এলাকায় মাটিতে পানি দেওয়া হয় সেখানে এই পিঁপড়া স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে৷ যেমন খেলার মাঠ কিংবা ব্যক্তিগত বাগান৷

কারমেন কারুসো নামের এক ব্যক্তি প্রথম কামড় খেয়ে ব্যথা পেয়ে বুঝতে পেরেছিলেন যে এই পিঁপড়া মোটেই স্থানীয় প্রজাতির নয়৷ তাঁর গোলাপের বাগান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিয়ে কারমেন বলেন, ‘গোলাপপ্রেমী হিসেবে সেটা আমার কাছে মারাত্মক অভিজ্ঞতা৷ আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে৷ অনেক ভালোবাসা দিয়ে আমি গোলাপের যত্ন নিই৷ যখন দেখি, এই পিঁপড়া আমার সাধের গোলাপ নষ্ট করে দিচ্ছে, তখন মনে হয় তারা যেন আমাকেই আহত করছে৷ এখনো জানি না, আমি কীভাবে এগুলোকে বিদায় করব।’

সিসিলির আঞ্চলিক প্রশাসনও এই পিঁপড়া নির্মূল করতে চায়৷ সম্প্রতি বন কর্মকর্তা জানলুকা ফেরলিতোকে বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে৷ তিনি সার্দিনিয়া থেকে একটি যন্ত্র আনিয়েছেন৷ সেটির মধ্যে একটি পাম্প ১৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বাষ্প পিঁপড়ার বাসার মধ্যে চালনা করে৷ এভাবে সিসিলির মানুষ অযাচিত অতিথিদের বিদায় করতে চায়।

প্রথম পরীক্ষার প্রায় ছয় সপ্তাহ পর জায়গাটি পরীক্ষা করে জানলুকা বলেন, ‘একটা পিঁপড়া এখনো ছিল৷ কিন্তু আরও পিঁপড়া দেখা যাচ্ছে না৷ এটা একটা পিঁপড়ার বাসা৷ হতে পারে, সেগুলো সেখান থেকে এখানে চলে এসেছে৷ এগুলোই রেড ফায়ার অ্যান্ট।’

রেড ফায়ার অ্যান্ট ধ্বংস করতে ফার্দিনান্দো ইতিমধ্যে নিজেই একটি পদ্ধতির সন্ধান করেছেন। তিনি সডাস্টের সঙ্গে পিঁপড়ার তরল বিষ মিশিয়ে তাতে চিনিও যোগ করেন।

ট্যাগ :

শেয়ার করুন

রেড ফায়ার অ্যান্ট: সিসিলির আতঙ্ক হয়ে উঠছে যে পিঁপড়া

সময় : ০৬:১৯:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

বিশ্বায়নের এই যুগে শুধু পণ্যই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে না। উদ্ভিদ ও প্রাণীও অযাচিতভাবে ভিনদেশে উদয় হচ্ছে। ইতালির সিসিলি দ্বীপে এক মারাত্মক পিঁপড়ার আবির্ভাব দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

মাত্র কয়েক মিলিমিটার হলেও অন্যতম আক্রমণাত্মক প্রজাতির পোকা হিসেবে রেড ফায়ার অ্যান্ট পরিচিত। কৃষিবিজ্ঞানী ফার্দিনান্দো কালদারেলা সিসিলির সাইরাকিউজ অঞ্চলে সেই পোকা পর্যবেক্ষণ করছেন৷ তিনি পিঁপড়ার বাসা দেখিয়ে বলেন, ‘এর অর্থ এই জমির ওপর পিঁপড়া ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলো গাছের নিচের শিকড় খেয়ে নেয় এবং চাষের জন্য উপকারী পোকামাকড়ের ওপরেও হামলা চালায়।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে এই পিঁপড়া আক্রমণাত্মক প্রজাতির লাল তালিকার শীর্ষে রয়েছে। ইউরোপের মাটিতে এমন পোকা থাকতে পারে না বলে ধারণা করা হলেও গত বছরের হেমন্তকালে বিজ্ঞানীরা তার সন্ধান পেয়ে চমকে উঠেছিলেন। সাইরাকিউজ অঞ্চলে সেই পিঁপড়া প্রথম চোখে পড়েছিল।

এর এক বছর আগেই ফার্দিনান্দো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সময় কেউ তাঁর কথায় কান দেয়নি৷ ফার্দিনান্দো বলেন, ‘এই পিঁপড়া বেশ বড়। এই প্রজাতির সম্প্রসারণ প্রতিরোধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল৷ এভাবে রেড ফায়ার অ্যান্ট নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত৷ কারণ ব্রাজিল, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেও এই পিঁপড়ার প্রসার প্রতিরোধ করতে পারেনি৷ ফলে কৃষি ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।’

এই প্রজাতির আদি নিবাস ব্রাজিল। এটি কীভাবে এবং কবে সিসিলিতে পৌঁছাল, তা এখনো জানা যায়নি৷ ফার্দিনান্দো মনে করিয়ে দেন, এখনো পর্যন্ত এই হামলা নিয়ে হইচই হচ্ছে না৷ তেমন বড় ক্ষতিও হয়নি৷ কিন্তু পিঁপড়ার বাসার সংখ্যা মারাত্মক হারে বেড়ে গেলে শস্য, ফল ও শাকসবজি চাষের বিশাল ক্ষতি হবে।

যেসব এলাকায় মাটিতে পানি দেওয়া হয় সেখানে এই পিঁপড়া স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে৷ যেমন খেলার মাঠ কিংবা ব্যক্তিগত বাগান৷

কারমেন কারুসো নামের এক ব্যক্তি প্রথম কামড় খেয়ে ব্যথা পেয়ে বুঝতে পেরেছিলেন যে এই পিঁপড়া মোটেই স্থানীয় প্রজাতির নয়৷ তাঁর গোলাপের বাগান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিয়ে কারমেন বলেন, ‘গোলাপপ্রেমী হিসেবে সেটা আমার কাছে মারাত্মক অভিজ্ঞতা৷ আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে৷ অনেক ভালোবাসা দিয়ে আমি গোলাপের যত্ন নিই৷ যখন দেখি, এই পিঁপড়া আমার সাধের গোলাপ নষ্ট করে দিচ্ছে, তখন মনে হয় তারা যেন আমাকেই আহত করছে৷ এখনো জানি না, আমি কীভাবে এগুলোকে বিদায় করব।’

সিসিলির আঞ্চলিক প্রশাসনও এই পিঁপড়া নির্মূল করতে চায়৷ সম্প্রতি বন কর্মকর্তা জানলুকা ফেরলিতোকে বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে৷ তিনি সার্দিনিয়া থেকে একটি যন্ত্র আনিয়েছেন৷ সেটির মধ্যে একটি পাম্প ১৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বাষ্প পিঁপড়ার বাসার মধ্যে চালনা করে৷ এভাবে সিসিলির মানুষ অযাচিত অতিথিদের বিদায় করতে চায়।

প্রথম পরীক্ষার প্রায় ছয় সপ্তাহ পর জায়গাটি পরীক্ষা করে জানলুকা বলেন, ‘একটা পিঁপড়া এখনো ছিল৷ কিন্তু আরও পিঁপড়া দেখা যাচ্ছে না৷ এটা একটা পিঁপড়ার বাসা৷ হতে পারে, সেগুলো সেখান থেকে এখানে চলে এসেছে৷ এগুলোই রেড ফায়ার অ্যান্ট।’

রেড ফায়ার অ্যান্ট ধ্বংস করতে ফার্দিনান্দো ইতিমধ্যে নিজেই একটি পদ্ধতির সন্ধান করেছেন। তিনি সডাস্টের সঙ্গে পিঁপড়ার তরল বিষ মিশিয়ে তাতে চিনিও যোগ করেন।